পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
মহালয়ার ভোরে যেমন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ, পঙ্কজ কুমার মল্লিক-এর সুরে শিল্পীদের গাওয়া গান…, ঠিক তেমনই কালীপুজো মানেই পান্নালাল ভট্টাচার্য-এর সেই চির অম্লান, দরদী কন্ঠে গাওয়া শ্যামা-সঙ্গীত।
সেই সময়ে পুজোর সময়ে গ্রামাফোন রেকর্ড কোম্পানীতে গান রেকর্ড করা হোত। মেজদাদা প্রখ্যাত গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য-এর সুরে গান গাইলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য.. “অপার সংসার, নাহি পারাপার, মাগো আমার…”। রেকর্ড করে দুই ভাই বাড়ি ফিরলেন। মা অন্নপূর্ণা দেবী জিজ্ঞাসা করলেন অভ্যাস মতো.. “কেমন হোল রে পানু…”। ছেলের উত্তর ছিল..” ওই হোল আর কি..”। মায়ের প্রাণ, তাই মেজো ছেলে ধনঞ্জয়কে জিজ্ঞাসা করলেন..” ধনু, কেমন গাইলোরে পানু..”। ধনঞ্জয় বলেছিলেন..” মাগো.., বাঙালী যত দিন থাকবে,দেখে নিও মা, আমাদের পানুর গানও ততদিন থাকবে। বাঙালী ভুলবে না কোনদিন…।”
আজ এই ২০২২ এ দাঁড়িয়ে সেই কথা কতটা বাস্তব, জানিনা। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাঙালী পান্নালাল ভট্টাচার্যকে হয়তো আজকের দিনে তেমন চেনেনা, কিন্তু তাঁর গানগুলি আজও অম্লানকুসুম। সত্যিই তাই, আজও কালীপূজোর রাতে আতসবাজির রকমারিত্বের মধ্যেও আকাশে বাতাসে ভেসে আসে পান্নালালের গান…, সেই.. “চাইনা মাগো রাজা হতে, আমার রাজা হওয়ার সাধ নাই মাগো, পাই যেন মা দু’মুঠো খেতে…”। সে এক অনির্বচনীয় ভাবের আবেশ,…আপামর বাঙালির আকুতির বন্দনাভুতি।
১৯৩০ সালে পান্নালালের জন্ম,হাওড়া জেলার বালিতে। মায়ের নাম অন্নপূর্ণা দেবী, বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ১১ জন ভাই-বোনেদের মধ্যে পান্নালাল ছিলেন সবার ছোট। পান্নালাল বাবার স্নেহ পাননি। কারন তিনি তখন মাতৃগর্ভে, যখন তাঁর বাবা মারা যান। দাদারাই ছিলেন পিতা সমান।
১৯৪৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রথম গানের রেকর্ড… “আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলই ফুরায়ে যায় মা…”। স্বল্পায়ু জীবনে ৩৬ টি আধুনিক গান, অসংখ্য শ্যামাসংগীত, এবং ৩ টি বাংলা ছায়াছবির গান গেয়েছিলেন। নিজে “শ্রী অভয়” নামেও গান লিখে সুর করে গেয়েছেন। তার সাথে রয়েছে সাধক রামপ্রসাদ সেন, সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, রজনীকান্ত সেন, কাজী নজরুল ইসলাম, দাশরথি রায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রমুখদের ভক্তিমুলক গানের সম্ভার।