প্রথম পাতা প্রবন্ধ বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলংকার সুকুমার রায়

বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলংকার সুকুমার রায়

267 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

তাঁর লেখা কবিতার বই “আবোল তাবোল “, গল্প ” হ য ব র ল”, গল্প সংকলন “পাগলা দাশু” এবং নাটক “চলচিত্তচঞ্চরি”… সারা বিশ্বের সর্বকালের সাহিত্যের “ননসেন্স” আঙ্গিকের শিশু কিশোর এবং সব বয়সের মানুষের অতি প্রিয় চিত্তাকর্ষক সৃষ্টি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ (তাঁর পিতার বন্ধু ছিলেন) এই লেখনীর একজন গুণমুগ্ধ ছিলেন। বয়সে ছোট কাজী নজরুল ইসলাম-ও ছিলেন এই লেখনীর আর একজন গুণমুগ্ধ। বলা যায়, সেই যুগের সমস্ত বাঙালী মননশীল মানুষের কাছে এই লেখনী ছিল এক অমুল্য সম্পদ। যা আজও একইভাবে অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বিরাজমান। আধুনিক কালে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁকে মহাকবি আখ্যায় ভুষিত করা হয়।

১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর, মানে আজকের দিনে কলকাতায় বিখ্যাত মানুষ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর এবং শ্রীমতী বিধুমুখী দেবীর সন্তান রূপে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন…,তিনি হলেন সুকুমার রায়।

কলকাতায় তিনি পড়াশোনা শেষ করে চলে যান ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য।সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি এখানে সাহিত্য,ছবি আঁকা,সন্দেশ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করা,তখনকার দিনে বাংলায় মুদ্রনশিল্পের উন্নতি সাধন করা,ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে নিজেকে যুক্ত করেন। এবং অত্যন্ত সফলভাবে এই কাজগুলি করতে থাকেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময়ে সুকুমার রায় “ননসেন্স ক্লাব” নামে একটি ক্লাব তৈরী করেছিলেন। সেই ক্লাবের৷ নিজস্ব একটি পত্রিকা ছিল…যার নাম ছিল “সাড়ে বত্রিশ ভাজা”।

ইংল্যান্ড থেকে ফিরেও তিনি ঐরকম আরও একটি ক্লাব তৈরী করেছিলেন, যার নাম ছিল এক অভিনবত্বের.. “মন্ডা ক্লাব”(Monday club)।

ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি পত্রিকার সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তার লেখা “ননসেন্স” সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম এবং বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলংকার। যা আজও অনস্বীকার্য।

এমন কোনো বাঙালি নেই…, যিনি সুকুমার রায়ের লেখা কবিতা,গল্প,নাটক পড়েননি। যথাক্রমে… “বাবুরাম সাপুড়ে,কোথা যাস বাপুরে..”, ” রামগড়ুরের ছানা, হাসতে তাদের মানা..”, ” কুমড়ো পটাশ”, “খুড়োর কল”, ” গন্ধ বুড়ো “, ” শব্দ কল্পদ্রুম”,”গোঁফ চুরি”, ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য মজার মজার কবিতা। “অবাক জলপান”, “চলচিত্তচঞ্চরি “, ইত্যাদি ইত্যাদি মজাদার নাটক। “পাগলা দাশু”, “হ য ব র ল” ইত্যাদি ইত্যাদি আকর্ষণীয় গল্প,প্রভৃতি।

সুকুমার রায় ২৭ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল শ্রীমতী সুপ্রভা দেবী। তাদের একমাত্র সন্তান ছিলেন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক,সুরকার,চিত্রকর,গীতিকার, তথা এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়। শিশু সত্যজিতের যখন ২ বছর বয়স তখন ১৯২৩ সালে হঠাৎ কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সুকুমার রায় মারা যান।

বাংলা তথা সারা পৃথিবীর সাহিত্যে এক মহানক্ষত্র পতন ঘটেছিল।

আজ সেই ক্ষণজন্মা বিরাটকার প্রতিভার অধিকারী মহাকবি সুকুমার রায়ের জন্মদিনে তাঁকে জানাই আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং প্রণাম।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.