পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
আজ সরস্বতীর আরাধনার দিন। বাংলা এবং বাঙালির ঘরে-বাইরে বাগদেবীর পুজোর নানারূপের আয়োজন। বাড়িতে বাড়িতে, স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাবে ক্লাবে মা সরস্বতীর পুজো হয় সাড়ম্বরে।
শুধু এই বাংলায় নয়,ওপার বাংলাতেও এই দিনে দেবীর আরাধনা যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সারা ভারতবর্ষের প্রায় সবখানে বিদ্যা,সঙ্গীত এবং জ্ঞানের দেবী মা সরস্বতী পুজিত হন।
আমাদের দেশের বাইরেও যথা, জাপানে, ইন্দোনেশিয়ায়, চীনে, শ্রীলঙ্কায়, মায়ানমারে, থাইল্যান্ডে, তিব্বতে, নেপালে, দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু জায়গাতে, ত্রিনিদাদ-টোবাগোতে, প্রভৃতি দেশেও দেবী সরস্বতীর পুজো হয়। এছাড়া আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, রাশিয়া, ইউরোপ-এর যেখানে প্রবাসী ভারতীয় বা বাঙালি আছেন, সেখানেই আজকের দিনে দেবী মা সরস্বতী পুজিত হন।
আমাদের দেশের রাজস্থানে মা সরস্বতীর মন্দির আছে। সরস্বতীর মন্দির আছে এই বাংলার হাওড়া জেলার হাওড়া ময়দানের কাছে।
হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় দেবী সরস্বতীর পুজো হতো। বৈদিক যুগেও দেবীর আরাধনা হতো। বৌদ্ধযুগেতেও দেবী সরস্বতীর পুজো হতো। আসলে সিন্ধু সভ্যতার জন্ম হয়েছিল যে সিন্ধু নদীর উপত্যকায়, সেই সিন্ধু নদীর এক অন্তর্ভুক্ত নদী হলো সরস্বতী নদী। যে নদীর কথা আমরা বেদ,উপনিষদের বিভিন্ন জায়গায় পাই। রামায়ণ মহাভারতের বিভিন্ন লেখায় এই নদীর কথা পাওয়া যায়। আজকের সময়ে সরস্বতী নদী অন্তঃসলিলা নদী। কিন্তু এককালে এই নদীর প্রবাহিত জলপথ দিয়েই বেহুলা লখীন্দরের ভেলা ভেসে গিয়েছিল স্বর্গরাজ্যের দেবসভায়, এমনটাই আমরা পাই মনসামঙ্গল কাব্যে,কবি জীবনানন্দ দাসের কবিতার পঙক্তিতে।
যাইহোক, আজ সরস্বতী পুজোর দিনে বাঙালির এক চিরাচরিত পরম্পরা প্রতি বছরই দেখা যায়,সেটা হলো স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের পাঞ্জাবী আর শাড়ী সজ্জিত-সজ্জিতা হয়ে আজকের দিনে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া।সাথে থাকে চোখা-চোখি, চোখের চাউনিতে রোমাঞ্চ,একটু স্বাধীনতা, একটু দুরুদুরু বক্ষের ভয়,ইত্যাদি ইত্যাদি। অঞ্জলি দেওয়া,পুজোর ভোগ খাওয়া, নিজেদের মতো করে একটু “বড়ো বড়ো ” ভাব করে ঠাকুর দেখা,হাসি,মজা,ঠাট্টা, ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে সবমিলিয়ে এক অনাবিল আনন্দের দিন হয়ে ওঠে আজকের শ্রীপঞ্চমীর দিনটি।
সবাই আজ আনন্দে ভাসুক এই প্রার্থনা রইল। সবাই ভালো থাকবেন। আর মা সরস্বতীর কাছে নিবেদন মা সকলকে ভালো রেখো, ভালো মন-প্রাণ-চিন্তা-চেতনা দিও।