মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল আইন লঙ্ঘন করেছেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল আটকে রেখে এবং পরে সেগুলি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি। এই বিলগুলির কিছু ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ঝুলে ছিল। রাজ্য বিধানসভা সেই বিলগুলি ফের পাশ করার পর রাজ্যপাল তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠান, যা আদালতের মতে বেআইনি।
বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চ মন্তব্য করে, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ সদিচ্ছা নয়, বরং সংবিধান পরিপন্থী। আদালত জানায়, রাজ্যপালের এই বিল আটকে রাখা এবং পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো আইনত ভুল এবং তা বাতিলযোগ্য।
আদালত জানায়, সম্প্রতি পঞ্জাবের রাজ্যপাল সংক্রান্ত একটি মামলায় তারা স্পষ্ট করে দিয়েছিল, কোনও রাজ্যপাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকে রাখতে পারেন না। সেই রায় প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বিলগুলি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান, যা আদালতের মতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ:
- সংবিধানিক পদাধিকারী হিসেবে রাজ্যপাল রাজ্যের কল্যাণ ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকেন।
- তাঁর শপথেই রাজ্যের মানুষের মঙ্গল করার প্রসঙ্গ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।
- রাজ্যপাল যেন রাজ্য বিধানসভার কাজে বাধা সৃষ্টি না করেন, সেই বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।
- সংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ সংবিধানের সীমার মধ্যেই হতে হবে।
- রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আদালতের আওতার বাইরে হলেও, রাজ্যপালের পদক্ষেপ অবশ্যই বিচারাধীন হতে পারে।
- সংবিধানিক পদাধিকারীরা যেন কেবল সাংবিধানিক মূল্যবোধ দ্বারা চালিত হন, সাময়িক রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়।
তামিলনাড়ু সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে এই রায় দিয়েছে আদালত। সরকার জানায়, রাজ্যপাল দীর্ঘদিন ধরে একাধিক বিল অনুমোদন করছেন না, যা সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যপালের সামনে তিনটি বিকল্প থাকে — অনুমোদন দেওয়া, তা আটকে রাখা, অথবা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো। কিন্তু রাজ্যপাল তিন বছর বিলগুলি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না করে, পরে তা ফের পাশ হওয়ার পরও বিধানসভায় ফেরত না পাঠিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপালদের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে:
- কোনও বিল আটকে রেখে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে চাইলে তা এক মাসের মধ্যে করতে হবে, মন্ত্রিসভার পরামর্শে।
- মন্ত্রিসভার পরামর্শ ছাড়া বিল ফিরিয়ে দিতে চাইলে তা তিন মাসের মধ্যে করতে হবে।
- বিধানসভা কোনও বিল পুনরায় পাশ করলে, রাজ্যপালকে এক মাসের মধ্যে অনুমোদন দিতে হবে।
রাজ্যপালের দফতর অবশ্য জানায়, তাঁর আশঙ্কা ছিল কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে সংঘাতের এবং তাই তিনি জাতীয় স্বার্থে বিলগুলি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন।
তবে আদালত মন্তব্য করে, রাজ্যপাল সংবিধানবিরোধী ভাবে নিজস্ব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।