দুর্যোগের মেঘ কাটতে না কাটতেই ফের প্রাণ ফিরে পাচ্ছে পাহাড় ও ডুয়ার্স। বুধবার সকালে পরিষ্কার আকাশে সূর্যের উঁকি, দৃশ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘা—অবশেষে খুলে গেল টাইগার হিল। একইসঙ্গে আবার শুরু হয়েছে টয় ট্রেনের জয় রাইড।
পাহাড়ে রাস্তা খুলে যাওয়ায় দার্জিলিং, কালিম্পং এবং গ্যাংটকের পথে ফিরছে পর্যটক। পাঙ্খাবাড়ি, তিনধারিয়া হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা এখন খোলা। লাভা হয়ে যাওয়া যাচ্ছে কালিম্পং এবং গ্যাংটকেও।
এদিকে, উত্তর সিকিমের লাচুং ও জিরো পয়েন্টে তুষারপাতের খবর পর্যটকদের উৎসাহ আরও বাড়িয়েছে।
বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিরিক, বিজনবাড়ি ও সুখিয়াপোখরিকে আপাতত বাদ দিয়ে পর্যটকরা বেছে নিচ্ছেন চিমনি, সিটং, দাওয়াইপানি, তাকদা-তিনচুলে, গোরুবাথান, লাভা, ঝান্ডি, পাশাবং, রিসপ, কোলাখাম, ডাবলিং, আলগারা, কাফেরগাঁও, পানবু, সামসিং, চুইখিম, পেডং, রামধুরা, তোদে তাংটা ইত্যাদি ডেস্টিনেশন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দীপাবলি পর্যন্ত অফবিট গন্তব্যগুলিতে ভালো বুকিং চলছে। আতঙ্কে যাঁরা বুকিং বাতিল করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন আবার ফিরছেন পাহাড়ের টানে।
উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি জানিয়েছেন, জঙ্গলের ভিতরে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে।
জলদাপাড়ায় জেপি ওয়াচ টাওয়ার ও হাতি সাফারি শিগগিরই চালু হবে।
গোরুমারা, বক্সা, জয়ন্তীতে ইতিমধ্যেই সাফারি শুরু হয়েছে। চিলাপাতাতেও শীঘ্র চালু হবে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, “দার্জিলিং পাহাড় ও উত্তর সিকিমের কয়েকটি জায়গা বাদে সর্বত্র পর্যটকদের যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দীপাবলি পর্যন্ত বুকিং দারুণ।”
সম্রাট সান্যাল, হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক, জানান, “বাস্তব ছবিটা না জেনে অনেকে অযথা ভয় পাচ্ছেন। এখন পাহাড়ে অনেক রুট খোলা, পর্যটকদের আসতে বাধা নেই।”
মঙ্গলবার এনজেপি স্টেশনে নামা পর্যটকদের অনেকেই দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমের পথে রওনা দিয়েছেন। এনজেপি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উদয় সাহা বলেন, “দু’দিন ব্যবসা খারাপ গেলেও আজ থেকে সব স্বাভাবিক। আবার পর্যটক ফিরছেন।”
যদিও বিপর্যয়ের দাগ এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি। রঙ্গিত নদীতে ভেসে পাওয়া দেহসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭। সুখিয়াপোখরি, বিজনবাড়ি ও তাবাকোশি থেকে বহু পর্যটককে উদ্ধার করে নামানো হয়েছে সমতলে।
তবু পাহাড় এখন আবার হাসছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান, টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখা যাচ্ছে—উত্তরবঙ্গের বুকজুড়ে ফিরছে প্রাণ আর পর্যটনের উচ্ছ্বাস।