ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ালেও মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজকুমার আগরওয়াল আশ্বাস দিলেন, “কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ যাবে না।” পানিহাটির প্রৌঢ় প্রদীপ করের আত্মহত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে যেখানে এনআরসি আতঙ্ক ফের রাজ্য রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়িয়েছে, সেখানে সর্বদল বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে সিইওর এই বার্তা অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে সাধারণ ভোটারদের।
মনোজকুমার আগরওয়াল বলেন, “বিহারে আমরা সময় পাইনি। কিন্তু বাংলায় পর্যাপ্ত সময় পেয়েছি। তাই কোনও বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগই নেই। ২০০২ সালের তুলনায় ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি স্বাভাবিক। অনেকের নাম স্থানান্তরিত হয়েছে।”
তিনি জানান, ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা। বিএলওরা প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং এনুমারেশন ফর্ম বিতরণ করবেন। তাঁদের অ্যাপেই থাকবে সমস্ত ভোটার তথ্য। পাশাপাশি ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করা হবে বর্তমান তথ্য। সিইওর কথায়, “প্রত্যেক ভোটারের থাকবে আলাদা কিউআর কোড। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের বা বাবা-মায়ের নাম থাকলে কোনও চিন্তা নেই। তবু যদি কারও নাম বাদ পড়ে, তাঁকে নোটিস পাঠিয়ে শুনানি করা হবে।”
তিনি আরও জানান, বিভ্রান্তি রুখতে প্রত্যেক জেলায় থাকবে হেল্পডেস্ক। সাধারণ মানুষ সেখানে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তাঁর দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়াটি হবে “১০০ শতাংশ স্বচ্ছ”।
তৃণমূলের অভিযোগ
বৈঠকের পরে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলার একটাও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দিলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। কমিশন ও বিজেপি মিলে চক্রান্ত করছে। প্রয়োজনে পা ভেঙে দেওয়া হবে।”
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও অভিযোগ করেন, “সিএএ-এনআরসি আতঙ্কে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। দায় কমিশনেরই। ভারতের নাগরিক কে, সেটি নির্ধারণের অধিকার কমিশনের নয়। এসআইআর আসলে এনআরসি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি।”
বামের মন্তব্য
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি দাগিয়ে দেওয়া চলবে না। কমিশনের কাজ নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা, নাগরিকত্ব যাচাই নয়।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যে ১১টি নথিকে নাগরিকত্ব প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, তা নির্ধারণের অধিকার কমিশনকে কে দিয়েছে?”বিজেপির প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া বলেন, “এনআরসি জুজু দেখাচ্ছে তৃণমূলই। তাই আত্মহত্যার দায় মুখ্যমন্ত্রীর। তৃণমূল বুঝে গিয়েছে, ২০২৬-এ হেরে যাবে বলেই এখন এসআইআরে ভয় পাচ্ছে।”