পুজোর উচ্ছ্বাস মিটতেই প্রকৃতির রোষে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল উত্তরবঙ্গ। পাহাড়ে ভূমিধস, সমতলে বন্যা — দুইয়ের সংমিশ্রণে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার একাংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দুর্গাপুজোর কার্নিভালের পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছিলেন।
তখনই তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, অল্প সময়ের ব্যবধানেই ফের উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি রাখতেই সোমবার ফের উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, সোমবার সকালে দমদম বিমানবন্দর থেকে শিলিগুড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পরই তিনি সরাসরি চলে যাবেন উত্তরবঙ্গের সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’তে। সেখানেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক কর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন তিনি।
বৈঠকে মূলত বন্যা ও পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন, পুনর্বাসন ও পরিষেবা পুনর্গঠন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যজুড়ে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নতুন করে বাড়ি তৈরির আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবার পাবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক আধিকারিকদের সরাসরি বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেবেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গেছে। ফলে রবিবার থেকেই উত্তরবঙ্গের প্রশাসনে তৎপরতা তুঙ্গে।
এই সফরে মুখ্যমন্ত্রীর আরও একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকায় একটি নতুন শিল্প প্ল্যান্টের উদ্বোধন করতে পারেন তিনি। পাশাপাশি, বন্যা-ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে প্রশাসনের পুনর্বাসন কার্য কতটা এগিয়েছে, তাও সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর শুধু প্রশাসনিক নয়, উত্তরবঙ্গবাসীর মনোবল বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি উপস্থিতি পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়াকে আরও গতি দেবে।
উত্তরবঙ্গের এক আধিকারিকের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে তদারকি করলে জেলা পর্যায়ে কাজের গতি বেড়ে যায়। পুনর্গঠন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হয়। জনগণের আস্থা ফিরে আসে।”