অবশেষে তিন বছর তিন মাস ১৯ দিনের বন্দিদশার অবসান। জেল থেকে মুক্তি পেলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁর মুক্তির নির্দেশ দেয়, আর মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই মুক্তি কার্যকর হয়।
দুপুর ২টো ২০ মিনিটে বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে চেপে বেরিয়ে আসেন পার্থ। বাইরে বেরিয়েই অনুগামীদের স্লোগান— “পার্থদা জিন্দাবাদ!”— চারদিক ভরিয়ে তোলে। সেই দৃশ্য দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, চোখে জল চলে আসে তাঁর।
নীলের উপর সাদা ফুলছাপ পাঞ্জাবি, মুখে নীল রঙের মাস্ক— এইভাবেই হাসপাতালের দরজা পেরিয়ে বাইরে আসেন প্রাক্তন মন্ত্রী। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল গাড়ি। চালকের পাশের আসনে বসে নাকতলার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
বাড়ি ফেরার পথে তাঁর গাড়ির পিছনে ছুটতে থাকে বাইকে চড়া দলীয় অনুগামীদের লম্বা মিছিল। ভিতরে বসে তিনি হাত জোড় করে ভিড়কে নমস্কার জানাতে দেখা যায়। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়ানো বহু মানুষ মোবাইলে সেই মুহূর্ত ধারণ করেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তিনি উত্তর দেননি, কেবল ঘাড় নেড়ে বোঝান— কোনও মন্তব্য করতে চান না।
২০২২ সালের ২৩ জুলাই, নাকতলার বাড়ি থেকে নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই থেকে চলেছিল তাঁর কারাবাস— প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
কয়েক মাস আগেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সিবিআইয়ের মামলায় বিচারপর্ব শুরু হলেই পার্থ, এসএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ-এর শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করা যাবে।
১৪ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার নির্দেশও দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সোমবার অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ হওয়ার পরই আদালত পার্থর জেলমুক্তির নির্দেশ দেয়।
এরপর আদালতের নথি যায় প্রেসিডেন্সি জেল, সেখান থেকে হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে, এবং মঙ্গলবার দুপুরে কার্যকর হয় মুক্তি প্রক্রিয়া।
তিন বছর পর অবশেষে নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন পার্থ। সকাল থেকেই হাসপাতালের বাইরে ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁর অনুগামীরা, অনেকে বাইক মিছিল করে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন।
নাকতলায় ফেরার পথে তাঁর গাড়ির পাশে চলেছে ‘পার্থদা জিন্দাবাদ’ স্লোগান, পতাকা, আর আবেগে ভরা জনসমুদ্র।