রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সংঘাত। তার মধ্যেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে UIDAI-এর দেওয়া একটি তথ্য। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে UIDAI–এর বৈঠকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩২ থেকে ৩৪ লক্ষ মৃত বাসিন্দার আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে এই তথ্য পৌঁছতেই তা ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
UIDAI-এর তথ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল
সমাজমাধ্যমে তৃণমূল দাবি করেছে, UIDAI সংসদে আগেই জানিয়েছে যে তারা রাজ্যভিত্তিক, বছরভিত্তিক বা কারণভিত্তিক আধার নিষ্ক্রিয়করণের কোনও তথ্য সংরক্ষণ করে না। সেই অবস্থায় এত বড় সংখ্যক নিষ্ক্রিয় আধারের তালিকা কী ভিত্তিতে তৈরি হল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। শাসকদলের অভিযোগ, এই তথ্য ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টা হতে পারে।
তৃণমূল লিখেছে, “UIDAI যদি কোনও রাজ্যভিত্তিক নিষ্ক্রিয়করণের তথ্য সংরক্ষণ না করে, তাহলে এই বিপুল তথ্যপঞ্জী কোন প্রমাণের ভিত্তিতে তৈরি হল? এটি সম্পূর্ণ অস্পষ্ট এবং সংবিধানকে উপেক্ষা করে।”
বিহারের উদাহরণ টেনে আরও উদ্বেগ প্রকাশ
তৃণমূলের দাবি, বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় হাজার হাজার মানুষকে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয়েছিল, পরে দেখা যায় তাঁদের অনেকেই জীবিত। তৃণমূলের আশঙ্কা, একই ধরনের পরিস্থিতি বাংলাতেও তৈরি হতে পারে। তাদের বক্তব্য, স্বচ্ছ যাচাই প্রক্রিয়া ছাড়া এই ধরনের তথ্য ব্যবহার করা হলে বহু বৈধ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
তৃণমূলের হুঁশিয়ারি
তৃণমূল জানিয়েছে, যদি ভুল তথ্যের কারণে কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ যায়, তবে তা শুধুমাত্র প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হবে। শাসকদল স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাবে এবং প্রয়োজনে গণআন্দোলন গড়ে তুলবে।
দলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “একজন বৈধ ভোটারের নামও যদি এই অস্বচ্ছ তথ্যের ভিত্তিতে মুছে দেওয়া হয়, আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি গণ আন্দোলন সংগঠিত করব। যারা এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত, তাঁদের ভোটবাক্সে জবাব দিতে হবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়েই আগেই প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। এখন UIDAI–এর নিষ্ক্রিয় আধার সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসায় তা নতুন করে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়িয়েছে। রাজ্যের প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও UIDAI–এর ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।