সমাজ এবং ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে যাঁর পরিচিতি বিশ্বজোড়া, যিনি ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম জনক—সেই রাজা রামমোহন রায়কে ‘ব্রিটিশদের দালাল’ বলে তীব্র বিতর্কে জড়ালেন মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার। তাঁর বক্তব্য ঘিরে উত্তাল রাজনৈতিক মহল।
বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইন্দর দাবি করেন, ‘‘ঔপনিবেশিক যুগে ইংরেজরা ভারতের মানুষের বিশ্বাস বদলাতে একটি চক্র গড়ে তুলেছিল। কয়েক জন ভারতীয়কে ভুয়ো সমাজ সংস্কারক হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায় তাঁদের মধ্যে একজন—যিনি ব্রিটিশদের দালাল হিসাবে কাজ করতেন।’’
ইন্দরের মতে, বাংলা ও আশপাশের অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে সে সময়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে বদলানোর চেষ্টা হয়েছিল। নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘ধর্মান্তকরণের সেই চক্রকে যিনি বন্ধ করেছিলেন, তিনি হলেন বিরসা মুন্ডা। তিনিই আদিবাসী সমাজকে বাঁচিয়েছিলেন।’’
ইন্দর পারমারের মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘বিজেপির শিক্ষামন্ত্রীর ইতিহাস সম্পর্কিত নূন্যতম জ্ঞান নেই। সতীদাহ প্রথা বিলোপ, বিধবা বিবাহ চালু—এ সব কি ব্রিটিশ দালালি?’’ ইন্দরের মন্তব্যকে তিনি ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দেন।
এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসও বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে। তাঁদের দাবি, ‘‘বিজেপি নেতারা বারবার বাংলা-বিরোধী মানসিকতার পরিচয় দেয়।’’ ২০১৯ সালে অমিত শাহের রোড শো চলাকালীন কলেজ স্ট্রিটে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনাকেও নতুন করে স্মরণ করিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি সুকান্ত মজুমদার ও জেপি নড্ডাকেও নিশানা করেছে তারা।
ইন্দর পারমার অতীতেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন। একসময় তিনি দাবি করেছিলেন, “ভারত আবিষ্কার করেছিলেন ভাস্কো-দা-গামা নন, বরং চন্দন নামে এক ভারতীয় বণিক।” স্কুল শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি ইতিহাসবিদদের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলেছিলেন।
রামমোহনের মতো প্রগতিশীল চিন্তাধারার পথিকৃতকে ‘ব্রিটিশ দালাল’ বলে অভিহিত করার পর নতুন করে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র হয়েছে। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে অপমান করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। দেবেন্দ্রদের বক্তব্যে বিজেপির পক্ষ এখনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া মেলেনি।