তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক অভিযোগের পর রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজভবনে অস্ত্রশস্ত্র মজুত রয়েছে এবং সেখানে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগের পরই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে বাতিল করে সোমবারই কলকাতায় ফিরছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং তাঁর নেতৃত্বেই রাজভবনে চলবে নজিরবিহীন চিরুনি তল্লাশি। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, রাজভবনের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী বা এসআইআর ইস্যুতে প্রকাশ্যে কমিশনকে সমর্থন জানিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছিলেন, তার জেরে তাঁর সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। সেই আবহেই সাংসদের অভিযোগ রাজনীতিতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রবিবারই পাল্টা বিবৃতি দেয় রাজভবন। আর তার পরদিনই রাজ্যপাল সফর সংক্ষিপ্ত করে তল্লাশির ঘোষণা করেন। সোমবার সকালে জারি হওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ পুরো রাজভবন খালি করা হবে এবং রাজ্যপাল স্বয়ং এই যৌথ তল্লাশি অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন। অভিযানে অংশ নেবে কলকাতা পুলিশ, রাজভবন পুলিশ আউটপোস্ট, সিআরপিএফ, বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতর ও সিভিল ডিফেন্স অগ্নিনির্বাপণ মহড়া চালাবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, পুরো অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও কয়েকজন বিশিষ্টজন উপস্থিত থাকবেন।
রাজভবনের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা। অনেকের মতে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগকে রাজনৈতিকভাবে জবাব দিতেই এত বড় আকারের তল্লাশি আয়োজন করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই—অভিযোগ যে ‘ভিত্তিহীন’ তা প্রমাণ করা। আবার একাংশের মতে, রাজভবনের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তোলাই এই অতিসক্রিয়তার কারণ হতে পারে। যাই হোক, রাজ্যপাল–তৃণমূল সংঘাতের এই নতুন পর্বকে ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই আখ্যা দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ভোটের আগে যেভাবে রাজভবন–নবান্ন সম্পর্কের টানাপড়েন বেড়েছে, তার মধ্যেই রাজভবনের এই চিরুনি তল্লাশি রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে নতুন বিতর্ক তৈরি করবে কি না, তা এখন সময়ই বলবে।