পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বা বাংলা সহায়ক কেন্দ্রের কর্মীদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি পাঠিয়ে তিনি অভিযোগ জানান। দিন শেষে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল কমিশনের পক্ষ থেকে মৌখিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
সোমবার বিকেলে সিইও মনোজ বলেন, “কমিশনের নির্দেশে এমন রয়েছে। কমিশন বলেছিল, চুক্তিভিত্তিক কর্মী নেওয়া যাবে না। বিহারের মতো আমরা টেন্ডার করেছি।” এর অর্থ—চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিষিদ্ধ করার নির্দেশ কমিশনের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’, যা রাজ্যকে পালন করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তোলেন—কমিশন নাকি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনকে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। মমতার দাবি, এই মর্মে জেলাস্তরের আধিকারিকদের কাছে প্রস্তাবও তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিইও মনোজ বলেন, “এটি পলিসি ডিসিশন। আমি কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিই না।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিল্লির নির্বাচন ভবন কী করবে, সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজ্যের সিইওর স্পষ্ট অস্বীকৃতি। তাঁর বক্তব্য, “চিঠি গিয়েছে ওদের কাছে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে।”
উল্লেখ্য, এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবারও একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, যার জবাব এখনও দেয়নি নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর।
সেই চিঠিতে তিনি বিএলও-দের প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাবের অভিযোগ তুলেছিলেন। তবে সোমবার সিইও মনোজ বলেন, “বিএলও-রা প্রচুর কাজ করছেন। তাঁরা এসআইআরের হিরো।”
পাশাপাশি সিইও-র দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের অন্ত নেই। সিইও জানায়, চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ব্যবহার না করে টেন্ডারের মাধ্যমে এক বছরের জন্য ১,০০০ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ও ৫০ জন সফটওয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন—
“জেলাস্তরে আগে থেকেই কর্মী রয়েছে। তাহলে বাইরে থেকে বছরের পর বছর নিয়োগের প্রয়োজন কী? দুই ধরনের কর্মীর কাজের পার্থক্য কোথায়?”
তাঁর সন্দেহ—এই নিয়োগের নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বা বিশেষ দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
ভোটকেন্দ্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি সরাসরি। সাধারণত দুই কিলোমিটার ব্যাসার্ধে কোনও সরকারি বা আধাসরকারি ভবন নির্বাচনকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যাতে মানুষের সুবিধা হয় ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। ব্যক্তিগত ভবনে ভোটকেন্দ্র হলে স্বচ্ছতা ব্যাহত হওয়া, বিধিভঙ্গের আশঙ্কা এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের বৈষম্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
এই সমস্ত বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।