বিদেশি, অনুপ্রবেশকারী, ঘুসপেটিও—অসমের সাধারণ মানুষের কাছে বহুদিনের চিরচেনা শব্দ। তবে এ শব্দগুলির সঙ্গে ভয়, আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার যে আবহ যুক্ত হয়েছে, তার প্রধান কারণ এনআরসি। দেশের একমাত্র রাজ্য হিসেবে অসমে সম্পূর্ণ এনআরসি প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল। আর তার ফলেই ২০১৯ সালে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষের নাম বাদ যাওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়।
যাঁরা কয়েক দশক ধরে অসমে বাস করতেন, তাঁদের অনেকেই ‘অ-নাগরিক’ তকমা পেয়ে রাতারাতি ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটিয়েছেন।
কিন্তু ছ’ বছর পর উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—
‘বিদেশি’ শনাক্ত মাত্র ৩২,২০৭ জন!
কংগ্রেস বিধায়ক আবদুর রহিম আহমেদের প্রশ্নের জবাবে বিধানসভায় অসম চুক্তি বাস্তবায়নমন্ত্রী অতুল বোরা জানান, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ‘বিদেশি’ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৩২ হাজার ২০৭ জন।
বছরওয়ারি পরিসংখ্যান:
- ২০২১: ৬,৩০৪
- ২০২২: ৮,৭৯০
- ২০২৩: ৬,৭০৩
- ২০২৪: ৬,১২০
- ২০২৫: ৪,২৯০
মোট — ৩২,২০৭ জন
পুশব্যাক—মাত্র ১,৪১৬ জন
শনাক্তের তুলনায় সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়েছে মাত্র ১,৪১৬ জনকে।
বিরোধীদের যুক্তি, “এতো বড় নিরাপত্তা প্রকল্প, এত কোটি টাকার খরচ—তারপরও মাত্র ১,৪১৬ জনকে ফেরত পাঠানো? তাহলে ১৯ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হল কেন?”
হিমন্ত সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্নের ঝড়
২০১৬–২০২১ সময়কালে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সর্বানন্দ সোনেওয়াল। তখনই এনআরসি কার্যকর হয়। কিন্তু তখন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই এনআরসির তীব্র সমালোচক ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর তাঁর অবস্থান বদলে গেছে—অভিযোগ বিরোধীদের।
বিরোধীদের দাবি:
- ১৯ লক্ষ বাদ পড়া নামের সঙ্গে ৩২ হাজার ‘বিদেশি’র অঙ্ক মিলছে না
- এনআরসি প্রক্রিয়ায় গলদ ছিল
- সাধারণ মানুষের করের ১,৫২৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে—তার হিসেব কোথায়?
- ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা খরচ করে—যার অধিকাংশই নাকি অব্যবহৃত
- ফরেনার্স ট্রাইবুনালের পেছনে খরচ হয়েছে আরও মোটা অঙ্ক
২০২২ সালে ক্যাগ রিপোর্টেই বলা হয়েছিল—এনআরসি প্রকল্পে বিপুল আর্থিক অনিয়ম রয়েছে।
এবার সরকারের নতুন পরিসংখ্যান সেই দাবিকে আরও জোরালো করল।