প্রথম পাতা খবর এসআইআর আতঙ্কে সোনাগাছি থেকে বহু যৌনকর্মী ঘরছাড়া, এলাকায় বিশেষ শিবির করবে নির্বাচন কমিশন

এসআইআর আতঙ্কে সোনাগাছি থেকে বহু যৌনকর্মী ঘরছাড়া, এলাকায় বিশেষ শিবির করবে নির্বাচন কমিশন

10 views
A+A-
Reset

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার জেরে এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নথি-সংকট, পরিচয় সম্পর্কিত জটিলতা ও প্রশাসনিক অনুমান-নির্ভর হুমকির ভয়ে বহু যৌনকর্মী ইতিমধ্যেই এলাকা ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতির গভীরতা বুঝে গত শুক্রবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকে একটি চিঠি দিয়ে তিনটি সংগঠন যৌনকর্মীদের বাস্তব সমস্যার কথা জানায়। চিঠি পাওয়ার পর কমিশনের তরফে মৌখিক আশ্বাস এসেছে—সোনাগাছিতে বিশেষ সহায়তা শিবির হবে, সম্ভব হলে মনোজ আগরওয়াল নিজেও উপস্থিত থাকতে পারেন।

যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করা ‘আমরা পদাতিক’-এর সংগঠক মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানান, এসআইআর আতঙ্কে অনেকেই বিএলও-র দেওয়া ফর্মই গ্রহণ করেননি। “অনেকে ভাবছেন, ফর্ম নিলেই নথি জমা দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগের কাছেই কোনও কাগজ নেই। সে কারণে অনেকে সোনাগাছি ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেছি,” বলেন তিনি। সংগঠনগুলির দাবি, কমিশনের সঙ্গে কথাবার্তার পরই তাঁরা আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন যে আতঙ্ক অযৌক্তিক—তবে লিখিত নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তা কাটছে না।

সূত্রের খবর, কমিশন মৌখিক ভাবে জানিয়েছে—৯ ডিসেম্বর খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে সোনাগাছিতে বিশেষ শিবির করা হবে। তবে যৌনকর্মীদের অন্যতম বৃহত্তম সংগঠন ‘দুর্বার’ এখনও অপেক্ষায়। ‘দুর্বার’-এর সংগঠক বিশাখা লস্কর বলেন, “কমিশন যা জানিয়েছে, সবটাই মৌখিক। লিখিত নির্দেশিকা না মিললে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না। আমাদের মতো কমিউনিটির জন্য লিখিত আশ্বাস খুব জরুরি।”

চিঠিতে যৌনকর্মীদের পক্ষ থেকে তিনটি প্রধান সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথমত, গ্রাম বা ভিনরাজ্য থেকে আসা বহু যৌনকর্মীর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ নেই। ফলে ২০০২ সালের নথি সংগ্রহ করা অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, যারা পারিবারিক বা সামাজিক চাপে বাড়ি ছেড়ে এই পেশায় আসেন, তাঁদের অনেকের কাছেই কোনও নথি থাকে না। তৃতীয়ত, এমন যৌনকর্মীও বহু রয়েছেন, যাঁরা পরিবারের কাছে তাঁদের পেশা গোপন করে রেখেছেন। ফলে পরিবারের নথি তোলা তাদের পক্ষে অসম্ভব।

বর্তমানে সোনাগাছিতে প্রায় ১০ হাজার যৌনকর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার প্রতিদিন পেশার প্রয়োজনে এলাকায় আসেন এবং পরে বাড়ি ফিরে যান। স্থায়ীভাবে সোনাগাছিতে বসবাস করেন প্রায় সাত হাজার যৌনকর্মী—এদেরই অধিকাংশের ভোটার কার্ড রয়েছে এবং তাঁরা ভোট দেন। শুধু তাই নয়, লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবাভাতা বা অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীও বহুজন। তাদের যুক্তি—“সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগী হওয়ার পরেও নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন কেন উঠছে?”

যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলি একবাক্যে বলছে—এরা এসআইআরের বিরুদ্ধে নয়, বরং কমিশন যেন বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়। কারণ, নথিহীনতার জন্য যাতে কোথাও ভোটাধিকার বা নাগরিকত্ব নিয়ে অযথা প্রশ্ন না ওঠে। এসআইআর-এর প্রাথমিক পর্ব শেষ হচ্ছে ৪ ডিসেম্বর, আর ৯ ডিসেম্বর খসড়া তালিকা প্রকাশ। তার আগেই সোনাগাছির মতো জনবহুল কমিউনিটিতে আতঙ্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কমিশনের হস্তক্ষেপ এখন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

কমিশনের মৌখিক আশ্বাসে সংগঠনগুলি আশাবাদী হলেও লিখিত নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত সোনাগাছির পরিবেশে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা বজায়ই রয়েছে।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.