পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। দিল্লিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে এসআইআরের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা অভিযোগ তোলার পর পরই কমিশন এক বিবৃতি জারি করে জানায়—তৃণমূলের আনীত অভিযোগ “অসত্য”।
তৃণমূলের প্রতিনিধিদল তাদের বৈঠকে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ৪০ জন মৃত ব্যক্তির তালিকা কমিশনের হাতে তুলে দেয় এবং দাবি করে, এই মৃত্যুর জন্য কমিশন ও সিইসি দায়ী। কমিশন সেই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে জানিয়েছে, তথ্যভিত্তিক নয় এমন প্রচার ও আতঙ্ক ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই সঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, এসআইআর প্রক্রিয়া যাতে একেবারে নিরপেক্ষভাবে হয় সে জন্য এবার বিশেষ ‘রোল অবজার্ভার’ নিয়োগ করা হবে। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকেন্দ্রিক বিবাদের আবহে নজরদারির এই অতিরিক্ত স্তরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের প্রাক্তন আমলা সুব্রত গুপ্তকে এবার বিশেষ রোল অবজার্ভার করা হয়েছে। তাঁর দায়িত্ব—এসআইআর চলাকালীন একজন ভোটারও যাতে ভুলবশত বাদ না যান, তা নিশ্চিত করা। জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তিনি সমগ্র প্রক্রিয়ার ওপর নিরীক্ষার ভূমিকা পালন করবেন।
এতেই সীমাবদ্ধ নয়, এসআইআর চলাকালীন ২৪টি জেলায় মোট ১২ জন ইলেক্টোরাল রোল অবজার্ভার নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্যেরই অভিজ্ঞ আমলাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় তাঁদের ভূমিকা হবে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক ও জেলাশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দেওয়া।
কমিশন আরও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে—বিএলওদের কোনওভাবেই ভয় দেখানো, প্রভাবিত করা বা বাধা দেওয়া যাবে না। কমিশনের মতে, বিএলওরাই এসআইআর কার্যক্রমের মূল ভিত্তি এবং তাঁদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
তৃণমূলের পাঁচ দফা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন জানিয়েছে, দলটি যেন ৯ ডিসেম্বরের পরে তাদের দাবি, প্রমাণ ও আপত্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে জমা দেয়, কারণ ওই দিনই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই তালিকা প্রকাশের পরই আপত্তি, দাবি বা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এসআইআরকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংঘাত চলছে, শুক্রবারের কমিশনের বিবৃতি এবং রোল অবজার্ভার নিয়োগকে তারই জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন নজর ৯ ডিসেম্বরের দিকে—যেদিন প্রকাশ পাবে খসড়া তালিকা, এবং শুরু হবে নতুন পর্বের রাজনৈতিক লড়াই।