সঙ্গীতা চৌধুরী
হাঁটি হাঁটি পা পা’ ছবিটি তৈরি হয়েছে একটি নিখাদ বাবা- মেয়ের সম্পর্কের গল্প নিয়ে। এই চরিত্র দুটিতে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী – রুক্মিণী মৈত্র খুব মানানসই লাগে। রুক্মিণী এখানে এক চাকুরিরতা সাধারণ মেয়ে, যে বাবাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। চরিত্রটিতে তাঁকে বেশ লেগেছে। বাবার চরিত্রে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর আবেগ, যে কোন মেয়েকেই স্পর্শ করবে। পরিচালক অর্ণব মিদ্যা এই পারিবারিক ছবিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট ছোট খারাপ ও ভালো ইমোশনস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একদম সাধারণ দর্শকদের বিনোদনের কথা ভেবেই ছবিটি তিনি বানিয়েছেন। এই ছবির দুটো দিক, এক দিকে মাতৃহারা কন্যার ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাবার মানসিক টানাপোড়েন। সেই সঙ্গে তাদের ঝগড়া। মেয়েটিও কিন্তু বাড়িতে বাবাকে একা রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না। অন্যদিকে রয়েছে জীবনের এক বিশেষ উপলব্ধি। তাতে বোঝা যায়, যে কোন বয়সে মানুষের একজন সঙ্গীর দরকার। সেটা জীবনের মধ্যভাগ পেরিয়েও। এটা কিন্তু সমাজের কাছে একটা বার্তা।
ছবিতে চিরঞ্জিতের নাম দীপক চক্রবর্তী। রিয়েল লাইফেও অভিনেতার নাম দীপক চক্রবর্তী। শুরুতেই আরেকটা দিকও নাড়া দেয় যখন অভিনেতার সামনেই তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় ছবি ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’-র নাম সহ উঠে আসে। অভিনেতার তরুণ সময়কার ছবিও দেখানো হয় দর্শকদের। তাঁর সুপারহিট ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিটির নাম বাড়ির পরিচরিকার ( ঈষিকা দে) নামের ক্ষেত্রে চিত্রনাট্যে সাজিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার। একটা নস্টালজিয়া ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বাবা – মেয়ের সংসারে এই মেয়েই গোটা বাড়ি সামলায়। একদিকে বাবা দীপককে আর অন্যদিকে মেয়ে মৌ( রুক্মিণী)- কে। ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে বাবা – মেয়ের রোজকার ঝগড়া ও খিটিমিটি লেগেই থাকে। আসলে এই ঝগড়ার পেছনে থাকে অন্য গল্প।

মেয়েটি চাকরি করে। তার এক প্রেমিকও আছে। প্রবাসী ছেলেটির নাম পোলুয়া (বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়)। বাবা চায় মেয়ে সংসারী হোক, কিন্তু মেয়েটি চায় না বাবাকে ছেড়ে যেতে। মেয়েকে সংসারী করতে বাবা এক অদ্ভুত পরিকল্পনা করে কাগজে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে বসেন। ফলস্বরূপ, ছবিতে আগমন ঘটে বনলতা সেনের ( অঞ্জনা বসু)। এখানে থেকে ছবিটি আলাদা গতি নেয়। টান টান উত্তেজনা নিয়ে এগিয়ে চলে ক্ল্যাইম্যাক্সের দিকে। বাবার এই পাত্রীকে মৌ কতটা মেনে নেবে ? ছবির বাকি গল্প জানার জন্য হলে যেতে হবে। অঞ্জনা বসুর দাপুটে অভিনয় ভালো লাগে। সন্দীপ ভট্টাচার্য ও তুলিকা বসুর চরিত্রগুলো যোগ্য সঙ্গত করে। অনির্বাণ অজয় দাসের কলমে ও সুরে, পালক মুচ্ছলের কন্ঠে ছবির টাইটেল ট্র্যাক মন ছুঁয়ে যায়। ইন্দ্রনাথ মারিকের ক্যামেরার কাজ ঠিক আছে। সামান্য কিছু ত্রুটি থাকলেও এই ছবির বিষয় ভাবনা দর্শকদের ভাবাবে।