দীর্ঘ জটিলতা ও দফায় দফায় আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে ভারতের মাটিতে ফিরলেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা সোনালি বিবি। শুক্রবার সন্ধ্যায় মালদহের ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে আট বছরের ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি। তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে যেমন স্বস্তি, তেমনই ক্ষোভ ও উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে—কারণ পরিবারে আরও চারজন এখনও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে আটকে রয়েছেন। তাঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
সন্ধে নামার সময় বোরখা পরিহিতা সোনালি সীমান্তে পৌঁছন। পাশে তাঁর ছোট ছেলে। বিএসএফের জওয়ান ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা তাঁদের গ্রহণ করেন। এরপর স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য সোনালিকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজে।
তৃণমূলের জেলা পরিষদ সভাধিপতি ঋতিকা মণ্ডল ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘একই পরিবারের দু’জন ভারতীয় বলে প্রমাণিত হলেন। তাহলে বাকি চারজনকে এখনও কেন ছাড়া হল না? কেন্দ্র কীভাবে এদের প্রতি এমন অবহেলা দেখাতে পারে?’’ তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের অন্যায় ও উদাসীনতার ফলেই পরিবারটি পুরোপুরি দেশবিচ্ছিন্ন হয়ে রইল।
উল্লেখ্য, গত জুনে দিল্লি পুলিশ সোনালি ও তাঁর পরিবার-সহ ছ’জনকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে আটক করেছিল। পরে বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্তে ‘পুশব্যাক’ করে। বাংলাদেশ পুলিশ আবার তাঁদের অনুপ্রবেশ মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। অন্তঃসত্ত্বা সোনালির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে সেই সময় থেকেই চরম উদ্বেগ ছড়ায়।
কলকাতা হাই কোর্ট সোনালি পরিবারকে দ্রুত ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কেন্দ্র সে নির্দেশ না-মানায় আদালত অবমাননার মামলা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, সোনালি ও তাঁর শিশুকে জরুরি ভিত্তিতে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আদালত নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া নিয়েও কেন্দ্রের উদ্দেশে কঠোর মন্তব্য করে।
যদিও সোনালি ও তাঁর ছেলে দেশে ফিরলেন, কিন্তু তাঁর স্বামী দানিশ শেখ, সুইটি বিবি ও দুই নাবালক সন্তান এখনও বাংলাদেশেই। তাঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।
সীমান্তে দাঁড়িয়ে সোনালি বারবার বলেছেন—তিনি শুধু চান তাঁর পরিবার পুরোপুরি দেশে ফিরুক। পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও তাই অপেক্ষা ও উদ্বেগের চিত্র স্পষ্ট।