১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে ‘গান্ধীহীন’ করার পথে আরও এক ধাপ এগোল মোদি সরকার। বিরোধীদের তুমুল হইহট্টগোলের মধ্যেই ধ্বনিভোটে লোকসভায় পাশ করানো হল ‘জিরামজি’ বিল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে আয়োজিত শিল্প ও বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “মনরেগা থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া লজ্জার। আমরা জাতির জনককে ভুলে যাচ্ছি।” একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যের ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের নাম বদলে মহাত্মা গান্ধীর নামে ‘মহাত্মা-শ্রী’ রাখা হবে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে মমতার মন্তব্য, “ওরা যদি গান্ধীজিকে সম্মান দিতে না পারে, আমরা দেব। নেতাজি থেকে গান্ধীজি— সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান দিতে আমরা জানি।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান লোকসভায় যে বিল পেশ করেন, তাতে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (MGNREGA)-এর নাম বদলে ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)’, সংক্ষেপে VB-G RAM-G বা ‘জিরামজি’ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলে বছরে কাজের দিনের সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করার কথা বলা হলেও, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে রাজ্যগুলির উপর আর্থিক চাপ বাড়বে বলেই দাবি বিরোধীদের।
এই নামবদল এবং অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধেই সংসদের ভিতরে ও বাইরে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। সংসদ চত্বরে ব্যানার-পোস্টার হাতে মিছিল করেন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা। কংগ্রেসের তরফে সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে-সহ শীর্ষ নেতারা সেই বিক্ষোভে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসও আলাদা করে প্রতিবাদে নামে। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য— ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম সরানো যাবে না।
বিরোধীদের অভিযোগ, প্রকল্পের নাম থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং তা জাতির জনকের অবমাননার শামিল। সেই সুরেই এবার রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিলেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যুতে মমতার কড়া অবস্থান কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাতকে আরও তীব্র করবে, পাশাপাশি গ্রামীণ কর্মসংস্থান ও গান্ধীর উত্তরাধিকার— দুই বিষয়কেই একসঙ্গে সামনে এনে নতুন রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল।