প্রথম পাতা খবর প্রতিবাদের আসরেও অপরাধীদের অনুপ্রবেশ, মহিলাদের অসম্মান, আরও সচেতন হওয়া জরুরি

প্রতিবাদের আসরেও অপরাধীদের অনুপ্রবেশ, মহিলাদের অসম্মান, আরও সচেতন হওয়া জরুরি

366 views
A+A-
Reset

অর্চনা চৌধুরী

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ। বিচারের দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রায় এক মাস ধরে নানা জায়গায় মিছিল, সভা, বিক্ষোভের আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ, এই প্রতিবাদের আসরেও মহিলাদের অসম্মান করার ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রতিবাদের মধ্যেই অপরাধীরা অনুপ্রবেশ করছে এবং তাদের ঘৃণ্য কাজের জন্য এই কর্মসূচিগুলিকেও কলুষিত করছে।

সম্প্রতি যাদবপুর এবং বারাসাতসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী মিছিল ও সভায় এমন কিছু ঘটনা সামনে এসেছে, যা সমাজকে আরও উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যৌন হেনস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিবাদের স্থানকেও গ্রাস করছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমাজের সচেতন অংশের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, যেই আন্দোলন মহিলাদের সুরক্ষার দাবিতে এবং একটি সঠিক বিচারের প্রত্যাশায় সংগঠিত, সেই আন্দোলনই যদি মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

গত রবিবার ধর্মতলায় বিশিষ্টদের ধর্না মঞ্চে উত্তেজনা দেখা দেয়। নাগরিক সমাজের ডাকে মিছিল ও ভোর চারটে পর্যন্ত তাঁদের প্রতিবাদ চলে। সেই পরিস্থিতিতে রাত দশটা নাগাদ এক মদ্যপ যুবক সেখানে তাণ্ডব চালায়। সেখানে থাকা মহিলাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ওই মদ্যপ যুবক। বুধবার রাতে গড়িয়ায় ৬ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে কর্মসূচিতে এক ব্যক্তি মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। অভিযোগ, তিনি মদ্যপ ছিলেন। একই তারিখে বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে মা ও মায়ের বান্ধবীর দিকে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করতে দেখে তার প্রতিবাদ করায় মত্ত ব্যক্তির হাতে আক্রান্ত হন ছেলে। জেলা থেকেও এমন একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে।

এ ছাড়াও বুধবার রাতে শ্যামবাজারে আন্দোলনকারীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছেঅভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও শুনতে হয় তাঁকে। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পরেও আন্দোলনকারীদের ধিক্কার স্লোগান শুনে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, তাঁকে লক্ষ্য করে জলের বোতল, জুতো ছোড়া হয়। এর পিছনে কয়েকজন মদ্যপ ব্যক্তির ভূমিকা ছিল বলে জানা গিয়েছে।

অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন বলেন, “আমরা ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নেমেছি, অথচ এখানেই আমাদের অসম্মান করা হচ্ছে।” এমন অভিযোগ উঠে আসায় আন্দোলনের প্রতি মানুষের আস্থায় প্রভাব ফেলছে। সমাজের একাংশের মতে, অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে এই ধরনের জনসমাবেশের, যেখানে তারা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করার চেষ্টা করছে। মূল আন্দোলন থেকে বিষয়টি দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে তারা। এই ধরনের পরিস্থিতি সমাজের অন্য অংশকে হতাশ করছে। তারা মনে করছেন, এর ফলে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ন্যায়বিচারের দাবি, ক্ষুণ্ণ হয় এবং আন্দোলন তার গন্তব্য থেকে সরে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে সচেতন মহল এবং আন্দোলনকারীরা আরও সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, আন্দোলনের জায়গায় অপরাধীদের প্রবেশ রুখতে হবে এবং মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শুধু ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নামলেই হবে না, বরং সেই আন্দোলনের মধ্যেও যেন কোনও অপরাধ না ঘটে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সামাজিক আন্দোলন এবং জনসচেতনতার মূল লক্ষ্যই হল অন্যায়ের প্রতিবাদ করা এবং মানুষের ন্যায়বিচারের দাবি জানানো। তবে, সেই আন্দোলন যদি আরও অপরাধের জন্ম দেয়, তাহলে তা সমাজের পক্ষে আরও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই, আন্দোলনকারীদের উচিত নিজেদের মধ্যেও সংহতি বজায় রেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.