রাজা রায়: অগ্নিপথ নিয়ে দেশজুড়ে আগুন জ্বলছে। সেই আগুন ঘি ঢাললেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
চার বছরের মেয়াদে যুবক-যুবতীদের অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগ করবে কেন্দ্র। মাত্র চার বছরের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন তারা। এই স্বল্প মেয়াদী প্রকল্পে যোগ দেবেন তাঁদের বলা হবে অগ্নিবীর।
দীর্ঘ দু’বছর ধরে সেনাতে কোনও নিয়োগ নেই। এ দিকে বেকারত্ব বাড়াছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কেউ জানে না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতে প্রলেপ দিতে মোদীজির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ঘোষণা করলেন অগ্নিপথ প্রকল্প। হয়তো ভেবেছিলেন গুজবাত ভোটের আগে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যাবে। আবার ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে জিতে ফের দিল্লির মসনদের বসাও সুবিধাজনক হবে।
কিন্তু সে গুড়ে বালি বুঝলেন ঘোষণার পরপরই। দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হল। ট্রেনে আগুন। দফায় দফায় পথ অবরোধ। ক্ষোভের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলেছে বিহার। যেখানে সেনায় ভর্তি হওয়ার জন্য যুবকরা স্বপ্ন দেখে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের হওয়ার মতো প্রস্তুতি নেয়। এই স্বপ্নে উপর ভিত্তি করে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার।
এ সব ধার্তব্যের মধ্যে না এনে হঠাৎ অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করে দিলেন মোদী সরকার। এর আসল উদ্দেশ্যটা তা পরিষ্কার করেছেন বিজেপির নেতা কৈলাস। তাঁর একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘একজন অগ্নিবীর চার বছরের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিলে ১১ লক্ষ টাকা পাবে। সে অগ্নিবীরের ব্যাজ পরবে। আমি যদি বিজেপি অফিসের নিরাপত্তার জন্য কাউকে নিয়োগ করতে চাই, তা হলে একজন অগ্নিবীরকেই অগ্রাধিকার দেব।’’
এটাই আসলে বিজেপির মনে কথা। যুবক-যুবকতীদের জন্য স্থায়ী ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা নয়। সাময়িক কাজের সুযোগ করে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটা। এ ক্ষেত্রে একটা সুবিধাও আছে। স্থায়ী চাকরি হলে কাজ পাওয়ার পর ভুলে যেতে পারেও চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হবে না। অস্থায়ী চাকরি হলে দলের পিছনে পিছনে ঘুরতে হবে কাজ পাওয়ার জন্য। এই যেমন অগ্নিবীররা বিজেপি অফিসে নিরাপত্তাকর্মী হওয়ার জন্য দলের নেতাদের পিছনে ঘুরবেন। চাকরির মেয়াদ বাঁচিয়ে রাখার জন্য দলদাস হয়ে থাকবেন।
তাই এই প্রকল্পের পিছনে পরিকল্পনা আছে সুদূরপ্রসারী। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য নয়, দলের জন্য। দলের স্বার্থে। তবে কিছু দিন আগে তিন কৃষি আইন নিয়ে যে ভাবে মুখ পুড়েছে মোদী সরকারের এ বার না অগ্নিপথ নিয়ে তেমনটা।