প্রথম পাতা প্রবন্ধ প্রণম্য বরেণ্য দেশ নেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু-র পবিত্র জন্মদিনে আমাদের শপথ

প্রণম্য বরেণ্য দেশ নেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু-র পবিত্র জন্মদিনে আমাদের শপথ

621 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

মানব সভ্যতায় সারা পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য আপোষহীন লড়াই করে সারা দুনিয়াটাকে কাঁপিয়ে দিয়ে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া বোধহয় একমাত্র তাঁর জীবনেই ঘটেছিল। কোথায় গেলেন তিনি? কি ঘটনা ঘটেছিল তাঁর জীবনে? নাকি ঘরে বাইরের কোন গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন তিনি!! আর তাই যদি হয়,তার পেছনে কারন কি ছিল,বা সেই ষড়যন্ত্রের ষড়যন্ত্রকারীরাই বা কারা ছিল,…ইত্যাদি ইত্যাদি… আজও সেইসব প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি, আমাদের দেশের ইতিহাসের এবং দেশবাসীর কাছে এটাই এক বিরাট রহস্যময় বিষয়।

হ্যাঁ…আমরা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর কথাই বলছি। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায় সেই ১৯৪৫ থেকে আজ ২০২৩ পর্যন্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও নেতাজীর সেই অন্তর্ধান রহস্যের কোনও প্রামান্যতার হদিশ মেলেনি, সমাধানও হয়নি। শুধু মাঝে মধ্যে হুজুগের মতো হিড়িক ওঠে, একজন বা একাধিক জন প্রাক্তন বিচারপতি বা বিচারপতিদের মাথায় বসিয়ে রহস্য সমাধানের জন্য সরকারি কমিশন বসে, তারপর বেশ কয়েকবছর পরে একটা গোল গোল করে কিছু মন্তব্য প্রকাশিত হয়,দেশের মানুষ তার কুল কিনারা খুঁজে পায়না।ব্যাস,তারপর সব ধামাচাপা পড়ে যায়। শুধু হাওয়ায় ঘুরে মরে সহজ সরল একটি জিজ্ঞাসা ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট ঠিক কি ঘটেছিল জাপানের তাইহোকু বিমান বন্দরে? কোনও সদুত্তর পায় না সারা দেশ,এবং দেশবাসী।

যদিও কানাকানি হয় এই দেশের ভিতরে এবং বাইরে ঘটে যাওয়া এক বিরাট ষড়যন্ত্রের চোরাগোপ্তা রহস্যময় কাহিনী।

আসলে,আমাদের দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের চরিত্র ছিল এক জটিল। আর স্বাধীনতা প্রাপ্তি?সেতো নিছকই ক্ষমতার হস্তান্তর মাত্র। এবং সেই স্বাধীনতার মূল্য চুকিয়ে ছিল কয়েক লক্ষ নিরীহ দেশবাসী তাদের জীবন দিয়ে,কয়েক লাখ এই দেশের মা-বোনেদের ইজ্জত লুটের মধ্য দিয়ে,লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে ভিটেমাটি ছারখার হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। এক কথায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা পেয়েছি দেশের সাধারণ মানুষের লাশের ওপর দিয়ে,রক্ত পিচ্ছিল পথ দিয়ে মানে দেশ বিভাজনের মধ্য দিয়ে।এবং পাশাপাশি ইংরেজের সাথে এদেশের কিছু নেতাদের সাথে একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে।সেটা হলঃ ” Subhas Chandra Bose is the one and only enemy of British ruler…and he was war enemy of British Emperor. So,Netaji Subhas Chandra Bose should be handed over to British.. either dead or alive till the year of 1999.”

হ্যাঁ, এটাই ঐতিহাসিক এবং দিনের আলোর মতো সত্য যে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে একমাত্র নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকেই মনে করতো তাদের শত্রু,বাকী নেতাদের নয়। আবার পাশাপাশি এটাও সত্য যে অনেক বৃটিশ এবং অন্যান্য দেশের বিশ্ববন্দিত রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময়ে লিখেছেন যে সারা বিশ্বে নেতাজীর মতো এমন আপোষহীন,অনমনীয়,আর দেশের আর দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গিত প্রাণ সত্যিই বিরল।

আজকের আমাদের দেশের এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা) সমস্যাগুলির সম্ভাবনা নেতাজী সেই ১৯৪০ সালেই অনুধাবন করেছিলেন, আর করেছিলেন বলেই তিনি এই অখন্ড ভারতবর্ষের ঐতিহ্যকে বজায় রেখে তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীকে তৈরী করেছিলেন এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন ক্ষেত্র হিসাবে। তিনিই এদেশের একমাত্র এবং প্রথম রাজনৈতিক নেতা যিনি সেই ১৯৪০ সালেই তাঁর দূরদর্শিতা দিয়ে বুঝেছিলেন যে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অভিপ্রায় হলো এই বিরাট দেশটাকে খন্ড খন্ড করে নিজেদের কায়েমী শক্তি প্রতিষ্ঠা করা,সেখানকার বাজার দখল করা,নিজেদের তাঁবেদার করে রাখা। তাই এই বিষয়ে তিনি বিস্তারিতভাবে লিখে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু,মহম্মদ আলি জিন্না, বল্লভভাই প্যাটেল,মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, প্রমুখদের কাছে।

কিন্তু,না সেদিন এইসব নেতারা কেউই এই বিষয়ে কর্ণপাত অবধিও করেনি। তাই,ভারতবর্ষ দুটুকরো হয়েছিল। আর আজ সেই অখন্ড আমাদের জন্মভূমি বহুধায় আরও খন্ড খন্ড হওয়ার সম্মুখীন।

আজ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে তাঁর মহাপবিত্র শুভ জন্মদিনের প্রণাম এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের আপামর দেশের মানুষের একটাই দাবী হওয়া উচিৎ, যে নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচিত হোক,আর আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে তার ঐতিহ্য সম্বলিত পরম্পরায় সুরক্ষিত হোক।

আর দেশের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা সমদর্শী হোন,সৎ এবং জনকল্যাণমুখী কাজে আন্তরিকভাবে জনদরদী হোন। এটাই হোক আমাদের দেশের প্রণম্য,বরেণ্য একমেবাদ্বিতীয়ম দেশনেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে তাঁর শুভ জন্মদিনে তাঁর প্রতি সারা দেশবাসীর বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.