প্রথম পাতা প্রবন্ধ জ্বর, সর্দি, কাশিতে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক! পরিণতি মারাত্মক

জ্বর, সর্দি, কাশিতে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক! পরিণতি মারাত্মক

570 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

একটা অত্যন্ত পরিচিত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, এদেশের অনেক সাধারণ মানুষ তাদের জ্বর, সর্দি, কাশি-তে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক (antibiotic medicine) নিজেরাই খায়। অনেক সময়ে যেগুলো শরীরে রোগ নিরাময় তো করেই না, বিপরীতে বরং নতুন সমস্যার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে এই সমস্ত শরীরে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আর কার্যকর হয় না। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান (medical science)-এর পরিভাষায় বলা হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিট্যান্স (antimicrobial resistance) বলে। এবং পরিণতিতে মারাত্মক পরিণাম হতে পারে। এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।

এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিট্যান্স (AMR) কী? এটি হল, রোগের যে অনুজীবগুলি (ব্যাকটেরিয়া) রয়েছে,তাদের সাথে লড়াই কোরে এই অবস্থায় তাদের মেরে ফেলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতার ওষুধগুলি। অপরদিকে ব্যাকটেরিয়াগুলিও অ্যান্টিবায়োটিক-এর সাথে লড়াই চালিয়ে তারা জিততে চায়। অনেক সময়ে দেখা যায় ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতার মুখোমুখি হয়ে ওঠে প্রচন্ডভাবে,ফলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিট্যান্স চিকিৎসাগুলি তখন প্রায়শই অকার্যকর হয়ে ওঠে। এবং কিছু ক্ষেত্রে কোনও ওষুধ ঠিকঠাক কাজ করে না। ফলে, চিকিৎসা ব্যর্থ হয়ে যায়।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation /WHO) একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, অতি দ্রুত গতিতে antimicrobial resistance( AMR) তৈরী হচ্ছে,এবং অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ দিচ্ছে না এমন প্রাণঘাতি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

“ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ,সাউথ ইস্ট এশিয়া” নামে একটি জার্নালে বলা হয়েছে, যে এমনিতেই ওষুধের অভাব রয়েছে,তার ওপর পুরোনো অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করছে না,সুতরাং পরিস্থিতি খুবই জটিল।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এ এম আর)-এর উত্থান এবং দ্রুত তার বিস্তার বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি বার্তা চালাচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের দেশে,ভারতে।

ভারতীয় গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব রিসার্চ (ICMR)-এর মতে এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এ এম আর) গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে। জানানো হচ্ছে যে ২০১৯ সালে এ এম আর -এ মারা গিয়েছিল ৪.৫% মানুষ।

আর এইভাবে চললে এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (এ এম।আর)-এ ২০৫০ সালে কয়েক কোটি মানুষের প্রাণ চলে যাবে। আমাদের দেশে ভারতবর্ষে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে কিনে খায়।যা অত্যন্ত ভুল,বা এই কাজ করাটা মোটেই সঠিক নয়।

অনেক ডাক্তাররা আজকাল অনেক ভেবেচিন্তে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন দেন।

তাই সাধারণ মানুষের উচিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিজে নিজে কিনে না খেয়ে,বরং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া। আর প্রয়োজনে সেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে রোগীর শরীরে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর রাখা উচিত। এবং যথা সময়ে ডাক্তারকে রিপোর্ট করা।

এই সচেতনতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে সকল স্তরের মানুষকে অনুরোধ, কখনোই আপনার বা আপনার প্রিয়জনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবে না,খাওয়াবেন না।

এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ, এবং মেডিকেল প্র‍্যাকটিশনার রা উভয়েই সচেতন থাকুন।

এই অনুরোধ রেখে গেলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.