এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যার অভিযোগ ঘিরে উত্তাল উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি। মঙ্গলবার সকালে মহাজাতি নগরে ৫৭ বছর বয়সি প্রদীপ করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর থেকেই রাজনৈতিক তরজায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল দাবি করছে, এসআইআর ও এনআরসি নিয়ে আতঙ্কই প্রৌঢ়ের মৃত্যুর কারণ। বিজেপি অবশ্য এই দাবিকে রাজনৈতিক প্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরে প্রদীপ করের বাড়িতে পৌঁছে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার পর তিনি ফের আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন।
অভিষেকের অভিযোগ, “এই মৃত্যুর দায় অমিত শাহ আর জ্ঞানেশ কুমারের। মানুষকে ভয় দেখিয়ে, হেনস্তা করে এরা রাজনীতি করছে। কিন্তু এই অন্যায়ের বিচার হবেই।” তাঁর দাবি, “প্রদীপ করের ন্যায় আমরা নিশ্চিত করব — জাস্টিস ফর প্রদীপ কর।”
অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, “জ্ঞানেশ কুমার আর শাহের বাবা-ঠাকুরদার নাম কি ভোটার লিস্টে আছে? নিজেদের বংশের নাম তালিকায় আছে কিনা না দেখে মানুষকে কেন সার্টিফিকেট চাইছে?” তিনি আরও বলেন, “যে কেউ সার্টিফিকেট চাইবে, ওদের বেঁধে রাখুন। মানুষের প্রতি এমন হেনস্তা আমরা হতে দেব না।”
রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আবেদনও জানান তৃণমূলের এই নেতা। তাঁর বার্তা, “ভয় পাবেন না। আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে। যারা বছরের পর বছর এই রাজ্যে রয়েছেন, তাঁদের বাংলাদেশি বলে তাড়ানো যাবে না। বুকের রক্ত দিয়ে আপনাদের রক্ষা করব।”
অভিষেকের হুঁশিয়ারি, “এসআইআর-এনআরসি করে যদি একজনকেও বাদ দেয়, তাহলে এক লক্ষ মানুষ কমিশন ঘেরাও করবে।” তাঁর দাবি, এই লড়াই আইন ও ন্যায়বিচারের পথে চলবে, কিন্তু কোনও হেনস্তা সহ্য করা হবে না।
এদিকে প্রদীপ করের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। পরিবারের দাবি, ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে চাপ এবং ভয়ের পরিবেশই তাঁকে আত্মহত্যায় ঠেলে দেয়। বিজেপির বক্তব্য, “তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে ব্যবহার করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা ঠিক নয়।”
ঘটনার পর থেকে পানিহাটিতে চাপে প্রশাসন। এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে, যাতে কোনও অশান্তি না ছড়ায়।