কলকাতা: রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈঠক কালীঘাটে হওয়ার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত সেটিও ভেস্তে গেল। শনিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছিলেন আন্দোলনরত ডাক্তাররা, কিন্তু বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জটে এ দিনও বৈঠক অধরা রয়ে গেল।
নবান্নের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে নিজের বাসভবনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে, বৈঠকের আগে থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে বিতর্ক চলছিল লাইভ স্ট্রিমিং এবং ভিডিয়োগ্রাফি নিয়ে। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, বৈঠককে স্বচ্ছ করতে এবং জনসাধারণের সামনে বৈঠকের কথা প্রকাশ করতে লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই দাবি মানতে অস্বীকার করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অর্ণব মুখোপাধ্যায় জানান, “আমরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের জানানো হয় এটি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি হওয়ায় সেটা সম্ভব নয়। আমরা নিজের ভিডিয়োগ্রাফার নিয়ে বৈঠকের রেকর্ড রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটাও আমাদের মানা করা হয়েছে। এমনকি, বৈঠকের একটি রেকর্ড কপিও চেয়েছিলাম, সেটিও দেওয়া হয়নি।”
বৈঠকের মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বাইরে এসে আন্দোলনরত ডাক্তারদের বৃষ্টিতে না ভিজতে অনুরোধ করেন এবং চায়ের আমন্ত্রণ জানান। তবে, এতসব আমন্ত্রণের পরও মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং এবং ভিডিয়োগ্রাফির দাবি নস্যাৎ করে দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তোমরা ভিজো না। আমার সঙ্গে কথা বলেছিলে বলে তোমাদের ডাকা। আজ তোমাদের থেকে কিন্তু অনুরোধ এসেছিল। সেখানে কোথাও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কথা লেখা ছিল না। লক্ষ্মীভাই বোনরা। তোমরা মানুষের স্বার্থে বুঝবে। তোমরা আমার সঙ্গে কথা না বলতে পারো। এক কাপ চা খেয়ে যাও”।
তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি না-ই আসো তা হলে চিঠি দিলে কেন? আমাকে অসম্মান করছ। এর আগেও আমি তিন দিন অপেক্ষা করে বসে থেকেছি। রাজনীতি ভুলে যাও। মানুষের স্বার্থে এসো, কথা বলো। মিনিটস সই করে দেব, আমাদের তরফে একজন সই করবে, তোমাদের তরফেও এক জন সই করবে। তোমরা যদি কথা বলতে না চাও, বৈঠক না করো, অন্তত এক বার ভিতরে এসে চা খেয়ে যাও।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘সব দাবি মানা সম্ভব নয়। কোর্টে অনুমতি নিয়ে ভিডিয়ো দেওয়া হবে। আমার উপর ভরসা রাখো, তোমাদের মিসলিড করব না।’’
এখনও পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতার দাবিতে অটল থাকা এবং সরকারের পক্ষ থেকে সেই দাবি মেনে না নেওয়ায়, কালীঘাটের বৈঠকও নবান্নের মতোই ভেস্তে গেল।