‘দুয়ারে বিএলও’—এ বার সে দৃশ্য দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের হরিশ মুখার্জি রোডের মিত্র ইনস্টিটিউশন ভোটকেন্দ্রের ৭৭ নম্বর বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলও অমিতকুমার রায় পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ি, ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে।
বিএলও অমিতের হাতে ছিল মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের জন্য মোট ১৭টি ‘এনুমারেশন ফর্ম’। নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক বৈধ ভোটারকে এই ফর্ম প্রদান করতে হয়।
অমিতবাবু হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢুকতেই পুলিশ আধিকারিকেরা তাঁকে থামান এবং জানতে চান, “কোথায় যাচ্ছেন?” বিএলও জানান, তিনি ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ভোটারদের ফর্ম দিতে যাচ্ছেন—এটাই মুখ্যমন্ত্রীর ঠিকানা। নিজের পরিচয়পত্রও দেখান তিনি।
পুলিশ কর্তারা প্রথমে তাঁকে ভিতরে যেতে বাধা দেন এবং বলেন, নিরাপত্তার কারণে ফর্ম তাঁদের কাছেই দিতে হবে। কিন্তু বিএলও অমিত নির্বাচন কমিশনের নিয়মের দোহাই দিয়ে স্পষ্ট জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ছাড়া অন্য কারও হাতে ফর্ম দিতে পারবেন না।
কিছুক্ষণ আলোচনার পর পুলিশের একাধিক আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নির্দেশ মেলে—বিএলও যেন ভিতরে গিয়ে নিজে ফর্ম তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে অমিতবাবু নিজের ব্যাগ ও মোবাইল ফোন বাইরে জমা রেখে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশ করেন। সূত্রের খবর, সেই সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিএলও অমিত তাঁকে ফর্ম হস্তান্তর করেন এবং জানান, ফর্ম পূরণ হয়ে গেলে তাঁর অফিস থেকে জানানো হলে তিনি এসে তা সংগ্রহ করবেন।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, “ফর্ম পূরণ করা হলে আমরা দফতর থেকে যোগাযোগ করব।”
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বুধবারই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ফর্ম দিতে যাওয়া বিএলও অমিতকুমার রায়, বর্তমানে রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মী। তিনি সাংবাদিকদের কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে কমিশনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে—রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অন্য সাধারণ ভোটারের মতোই ভোটার তালিকা যাচাই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার থেকেই সারা রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া। রাজ্যের প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে বিএলও-রা (Booth Level Officer) ভোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন এনুমারেশন ফর্ম।
রাজনীতির উত্তেজনা ও সাধারণ মানুষের কৌতূহলের মাঝে বুধবারের এই ঘটনাটি প্রমাণ করল—‘দুয়ারে বিএলও’ অভিযান সত্যিই সর্বজনীন, মুখ্যমন্ত্রীও তার ব্যতিক্রম নন।