রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করে নিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা চারটি মামলার তদন্তে সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের যৌথ বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। শুক্রবার এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন তিনি।
এর আগে, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা শুভেন্দুকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্য সরকার শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে না এবং নতুন এফআইআর দায়ের করা যাবে না। এর ফলে গত তিন বছর ধরে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও পুলিশ কার্যত পদক্ষেপ করতে পারেনি।
শুক্রবার বিচারপতি সেনগুপ্ত জানান, “কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দীর্ঘদিন কার্যকর থাকতে পারে না। তাই সেই রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করা হচ্ছে।” পাশাপাশি তিনি বলেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে থাকা ১৫টি মামলার মধ্যে ১১টি বাতিল করা হয়েছে, আর চারটি মামলায় সিট গঠনের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত আরও জানিয়েছে, এই নির্দেশের বিষয়ে যদি শুভেন্দু অধিকারী বা তাঁর আইনজীবীদের কিছু বক্তব্য থাকে, তা হলে আগামী সোমবারের মধ্যে লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতে হবে।
বিচারপতির নির্দেশে এখন রাজ্য সরকার শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নতুন করে পদক্ষেপ করতে পারবে। এই বিষয়ে তৃণমূল নেতা ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিন-চার বছর ধরে যে বাধাটা ছিল, সেটা আর থাকছে না। উনি বেশি মস্তানি করে বেড়াতেন, সেটা এবার বন্ধ হবে। পুলিশ এখন যদি এফআইআর রুজু করে পদক্ষেপ করতে চায়, কোনও বাধা নেই।”
অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের হচ্ছে। তাঁর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, “আদালত অধিকাংশ মামলাই খারিজ করে দিয়েছে। শুধু কয়েকটি মামলায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তাই একে পুরোপুরি ‘রক্ষাকবচ প্রত্যাহার’ বলা যায় না। সিবিআইকে যুক্ত করা হয়েছে, কারণ রাজ্য পুলিশের নিরপেক্ষতায় আস্থা নেই।”
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই নির্দেশ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, রাজ্য সরকার বিরোধী দলনেতার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনিক চাপ বাড়াতে পারে। অন্যদিকে শাসক দলের বক্তব্য, “শুভেন্দু যদি অপরাধ করেন, তবে আইনের মুখোমুখি তাঁকেও হতে হবে— তিনি বিশেষ কেউ নন।”
