নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। গঙ্গাপাড়ের এই ঐতিহ্যবাহী শহর আলোর জগদ্ধাত্রী পুজো বলেই পরিচিত। কিন্তু আবহাওয়ার মারেই এবার সেই আলোর বাহার ম্লান। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় আলোকসজ্জার কাঠামো ও তোরণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে।
পথের ধারে তৈরি আলোর স্ট্রাকচারগুলির বাঁধন আলগা হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি জায়গায় আলো খুলে পড়তেও দেখা গেছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায়, দর্শনার্থী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আগেভাগেই আলোকসজ্জা খুলে ফেলছে চন্দননগরের একাধিক পুজো কমিটি।
চন্দননগরের এক পুজো কমিটির উদ্যোক্তা জানান, “সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আলোর তোরণ ও কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টি-জলের মধ্যেও দর্শনার্থীরা ভিড় করছিলেন। নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমরা তোরণ খুলে ফেলেছি। দর্শনার্থী ও পথচারীদের প্রাণের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, অনেক পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই আলোর গেট খুলে নিয়েছে। কোথাও কোথাও আলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুরে চন্দননগরের দুটি জায়গায় আলোর কাঠামো ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে, যদিও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে প্রবল দমকা হাওয়ায় মানকুন্ডুর কানাইলালপল্লিতে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী মণ্ডপ’-এর একটি অংশ ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনায় অন্তত সাতজন দর্শনার্থী জখম হন।
ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী ও চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, সঙ্গে ছিলেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনার এবং প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরা। আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় প্রশাসন। মন্ত্রী প্রশাসনকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেন। তার পর থেকেই শহরজুড়ে পুজো কমিটিগুলি সতর্কতা অবলম্বন করছে।
বুধবার সকাল থেকে চলা দুর্যোগে চন্দননগর স্ট্যান্ডে একটি বড় বিজ্ঞাপনের ব্যানার ভেঙে পড়ে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় আলোর গেটের বাঁধন আলগা হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা ছড়িয়েছে। গঙ্গাপাড়ের জগদ্ধাত্রী পুজোতে আলোর সাজই দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ হলেও, এবার প্রকৃতির কাছে হার মানতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “নিম্নচাপজনিত বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাব চলবে বলেই আশঙ্কা। তাই সমস্ত পুজো কমিটিকে আলোর কাঠামো পরীক্ষা করে ত্রুটিপূর্ণ অংশ খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধই এখন প্রথম লক্ষ্য।”