শুরুতেই নানা প্রশ্ন, ধন্দ আর আতঙ্ক! বাংলায় মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। কিন্তু প্রথম দিনেই যেন ছবিটা আশানুরূপ নয়। সকাল থেকেই রাজ্যের আনাচে-কানাচে দেখা গেল বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের ছবি।
দিনভর মানুষের মুখে ঘুরেছে নানা প্রশ্ন—“বিএলও কবে আমার বাড়ি যাবে?”, “বাড়িতে না থাকলে কী হবে?”, “পুরনো ঠিকানায় গেলে কি নাম বাদ পড়বে?”, “বিএলওর ছবি তুলে রাখতে হবে কি?”—এসব নিয়ে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
তার উপর নির্বাচন কমিশনের শুরুটাও ছিল ‘শম্বুকগতি’। সকাল পর্যন্ত খুব সামান্য সংখ্যক ফর্ম বিতরণ হওয়ায় মানুষের উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। দুপুর পর্যন্ত মাত্র চার লক্ষ ফর্ম বিলির পরই চাপানউতোর তৈরি হয় রাজ্যজুড়ে। যদিও দিনের শেষে কমিশনের দাবি—৩০ লক্ষ ইনিউমারেশন ফর্ম বিলি করা হয়েছে।
তবে ঘটনাবহুল ছিল মঙ্গলবার। গাইঘাটার চণ্ডীগড় স্পেশাল ক্যাডার এফপি স্কুলে তিনজন শিক্ষককে বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা তাঁদের দু’ঘণ্টার বেশি সময় অফিসে আটকে রাখেন। পুলিশ ও প্রশাসন গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।
হাওড়াতেও ঘটেছে অনুরূপ ঘটনা। দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভার ২৪ নম্বর বুথের বিএলও অনুপমা দাসকে পরিচয়পত্র না দেখানোর অভিযোগে স্থানীয়রা আটকে দেন। শেষ পর্যন্ত জগাছা থানার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে আলিপুরদুয়ার ও দুর্গাপুরের কিছু এলাকায় বিএলওরা কিট না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। কেউ কেউ কাজ না করার সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন। আবার রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, বিএলএ-২ প্রতিনিধিদের এখনও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি, এমনকি পুরনো ও নতুন ভোটার তালিকার ফটোকপিও মেলেনি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ৬৩ হাজার ৯৪০ জন বিএলএ-২ নিয়োগের তালিকা জমা দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কমিশন আবারও দলগুলিকে নতুন করে নাম জমা দিতে বলেছে।
অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী জানিয়েছেন, “আজ প্রথম দিন বলে কিছুটা ধীরগতি ছিল। কিন্তু আগামী সাত দিনের মধ্যে ফর্ম বিলি সম্পূর্ণ হবে। প্রতিটি বুথে গড়ে ৯০০ ফর্ম দিতে হবে।”
ইতিমধ্যেই কমিশন সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে। দিল্লিতে খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুমও—নম্বর ০১১-২৩০৫২০০২ ও ০১১-২৩০৫২১১০।
তবুও বিভ্রান্তি কাটছে না। কারণ, বিএলওদের ‘অন ডিউটি’ থাকার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট নির্দেশ আসেনি। কমিশন জানিয়েছে, এক মাস তাঁদের পূর্ণ সময়ের জন্য কাজে লাগানো হবে।
আজ উত্তরবঙ্গে আসছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। তবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা বলছে—এসআইআর শুরু হয়েছে প্রশ্ন, বিভ্রান্তি আর উৎকণ্ঠার আবহে।