বিরোধী শাসিত রাজ্যে ভোট এলেই তৎপর হয়ে ওঠে ইডি, সিবিআই, আয়কর—এমন অভিযোগ বহুদিনের। বিরোধী দলের দাবি, কেন্দ্রের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি। নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে হানা, তলব বা মামলা যে হঠাৎ করে বেড়ে যায়—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। এরই মাঝে সংসদে উঠে এল এক পরিসংখ্যান, যা বিরোধীদের অভিযোগকে আরও দৃঢ় করেছে।
তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহাের প্রশ্নের উত্তরে সোমবার অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইডি মোট ৬,৩১২টি মামলা রুজু করেছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১২০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা গেছে। অর্থাৎ, দশ বছরে ইডির মামলার দণ্ডাদেশের হার অত্যন্ত নগণ্য।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে— হাজার হাজার মামলার বাকি অংশ কোথায়? সেগুলি কি কেবল বিরোধীদের ভয় দেখানোর জন্যই করা হয়েছিল? বিরোধী শিবিরের দাবি, সংখ্যাগুলোই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য প্রমাণ করছে।
কংগ্রেসের বক্তব্য আরও স্পষ্ট, “নরেন্দ্র মোদি ইডিকে নিজের রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছেন। এটি গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আক্রমণ।”
ইডির মামলার সংখ্যা ধরাছোঁয়ার বাইরে
সরকারি তথ্য বলছে, আর্থিক প্রতারণা প্রতিরোধ আইন (PMLA)-এর মামলা গত কয়েক বছরে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে মামলা: ৫৫৭
- ২০২০-২১ অর্থবর্ষে মামলা: ৯৯৬
- ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মামলা: ১,১১৬
এর আগে কোনও বছরেই এই সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি পৌঁছয়নি।
২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৯৩টি মামলায় ইডি ক্লোজার রিপোর্ট দিয়েছে, কারণ আর্থিক দুর্নীতির কোনও প্রমাণ মেলেনি।
বিরোধীরা টার্গেট?
কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, গত দশ বছরে ১৯৩ জন বিরোধী সাংসদ, বিধায়ক ও নেতার বিরুদ্ধে ইডি মামলা করেছে, অথচ মাত্র দুইজনের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর অনেক ইডি-তদন্তাধীন নেতার বিরুদ্ধে মামলার গতি হঠাৎই শ্লথ—এমন অভিযোগও বহুদিনের।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন পরিসংখ্যান বিরোধীদের কণ্ঠে শক্তি জুগিয়েছে। তাঁদের দাবি, এজেন্সি রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আর কেন্দ্রকে স্পষ্ট করতে হবে—৬,৩১২ মামলার ৬,১৯২টির অবস্থা কী?
দেশজুড়ে যখন পরপর নির্বাচনের ঢেউ, তখন ইডির তথ্যপ্রকাশ রাজনৈতিক উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।