প্রথম পাতা খবর অমর একুশে! মাতৃভাষার প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার এক জীবন্ত স্মারক

অমর একুশে! মাতৃভাষার প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার এক জীবন্ত স্মারক

305 views
A+A-
Reset

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। বাংলা ভাষা ও বাঙালির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং মাতৃভাষার প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার এক জীবন্ত স্মারক। অবিভক্ত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলা মায়ের সন্তানরা। তাদের এই সংগ্রামে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।

সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করতে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। কিন্তু বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই ধারা ভেঙে মিছিল বের করেন। পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। সেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেক তরুণের দেহ। তাদের রক্তে সিক্ত হয় ঢাকার রাজপথ। এই রক্তস্নাত পথই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পথ দেখায়।

ভাষা আন্দোলনের এই আত্মত্যাগ শুধু বাংলা ভাষার জন্যই নয়, বিশ্বের সকল মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আজ পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি আছেন, সকলে একযোগে এই দিনটিকে শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে উদযাপন করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি শুধু একটি দিন নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের আত্মত্যাগ শুধু বাংলা ভাষাকেই রক্ষা করেনি, এটি বিশ্বকে শিখিয়েছে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় কীভাবে সংগ্রাম করতে হয়। আজও এই দিনটি এসে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা ফিরে তাকাই সেই ইতিহাসের দিকে, যেখানে বাংলা ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন কিছু তরুণ। তাদের এই আত্মত্যাগ চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে অম্লান থাকবে। ভাষা আন্দোলনের এই গৌরবময় অধ্যায় শুধু বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের সকল ভাষাপ্রেমিকের প্রেরণার উৎস।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.