আলোয় আলোকিত চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। কিন্তু শুধু আলো নয়, এবার চোখ টানছে শোলার সাজে নানা থিমভিত্তিক অঙ্গসজ্জা। বিগত কয়েক বছর ধরে এই প্রথাগত শোলাশিল্প এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে থিমের ছোঁয়ায়। প্রতিমার চালচিত্রে শোলার কাজে ফুটে উঠছে পৌরাণিক কাহিনি থেকে বাংলার উৎসব, স্থাপত্য, পরিবেশ এবং লোকশিল্পের অনন্য সংমিশ্রণ।
আগামী সোমবার ষষ্ঠী। তার আগে গঙ্গাতীরবর্তী শহর চন্দননগরের অলিগলিতে এখন পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। বর্ধমানের বনকাপাসি থেকে আসা শত শত শোলাশিল্পী দিনরাত এক করে প্রতিমা সাজাচ্ছেন নানা নতুন শিল্পধারায়।
চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, “গত চার বছর ধরে মায়ের অঙ্গসজ্জায় শোলার থিম-বৈচিত্র্য ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে। কখনও রামায়ণ-মহাভারত, কখনও পুরাণ, কখনও বাংলার সংস্কৃতি— এই থিমগুলোই এখন চন্দননগরের আকর্ষণ।”
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালে কোভিডের সময় যখন শোভাযাত্রা বন্ধ ছিল, তখন থেকেই পুজো কমিটিগুলো প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় নতুনত্ব আনতে শোলার কাজে বেশি বিনিয়োগ করতে শুরু করে। তার ফলেই আজ এই শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বহুগুণ।
শহরের বিভিন্ন বারোয়ারিতে থিমে এসেছে নজরকাড়া বৈচিত্র্য—
- মধ্যাঞ্চল বারোয়ারি: বিষ্ণুর দশ অবতার
- কুণ্ডুঘাট দালান: ১২ মাসে ১৩ পার্বণ
- হরিদ্রাডাঙা: পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক থিম
- পাদ্রিপাড়া: বাংলার স্থাপত্য ও বিষ্ণুপুরের ডোকরা শিল্প
- উর্দিবাজার: টেরাকোটা অঙ্গসজ্জা
- বোরোকালীতলা: রামায়ণ
- খলিসানি বারোয়ারি: সবুজায়ন
প্রতিটি প্রতিমার চালচিত্রে শোলার কাজের সূক্ষ্মতা ও কল্পনার বিস্তার চোখে পড়ছে স্পষ্টভাবে।
বনকাপাসির শিল্পী আকাশ পাল, যিনি এ বছর প্রায় ২০টি প্রতিমার অঙ্গসজ্জার দায়িত্বে, বলেন, “প্রথাগত সাজের পাশাপাশি এখন থিমের কাজও অনেক বেড়েছে। চন্দননগরে এই শোলাশিল্পের চাহিদা বছর বছর বাড়ছে। আমাদের গ্রাম থেকে শতাধিক শিল্পী এসেছেন এখানে।”
একসময় শুধু ঐতিহ্যবাহী সাজেই সীমাবদ্ধ ছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। কিন্তু এখন সেই শিল্পরূপে যুক্ত হয়েছে থিমের আধুনিকতা ও কল্পনার রঙ, যা একদিকে যেমন স্থানীয় শিল্পীদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি পর্যটকদের কাছেও শহরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।
