দুর্গাপুজো কাটতে না কাটতেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে যায় কালীপুজোর প্রস্তুতি। তার আগেই নবদ্বীপের কারিগরদের ব্যস্ততা চরমে। সারাদিন, সারারাত চলছে পিতলের খাঁড়া তৈরির কাজ। ছোট-বড় নানা মাপের খাঁড়া ঝুলছে নবদ্বীপের কর্মশালাগুলির কোণে কোণে। প্রতিবছরের মতো এবারও চাহিদা রয়েছে যথেষ্ট, তবে কাঁচামালের দামবৃদ্ধিতে শিল্পীদের মুখে চিন্তার রেখা।
নদিয়ার নবদ্বীপের রাজু অধিকারী বহুদিন ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। বংশানুক্রমে তাঁর পরিবার এই ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছে। দুর্গাপুজো এলেই কাজের চাপ বাড়ে, কিন্তু কালীপুজোর সময় সেই ব্যস্ততা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। রাজু অধিকারীর কথায়, “এই সময় খাওয়াদাওয়া ভুলে দিনরাত কাজ করতে হয়। দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও নবদ্বীপের তৈরি পিতলের খাঁড়ার চাহিদা প্রচুর। এখন তো বিদেশ থেকেও অর্ডার আসছে।”
প্রতিমা নির্মাণের অন্যতম অঙ্গ এই পিতলের খাঁড়া। দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী — প্রত্যেক মূর্তিতেই ব্যবহৃত হয় এই ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র। ফলে পুজোর মরসুমে খাঁড়া তৈরির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। রাজু জানান, পুজোর সময় প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী তাঁর কারখানায় কাজ করেন। নবদ্বীপের পিতলের খাঁড়া এখন ভিনরাজ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে আনন্দের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে। পিতলের কাঁচামালের দাম প্রতিবছরই বাড়ছে। এবারও তা আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। রাজু অধিকারীর অভিযোগ, “শ্রমিকদের মজুরি, বিদ্যুতের খরচ, বাজারদর সবই বেড়েছে। কিন্তু খাঁড়ার বিক্রিদর আগের মতোই। ফলে হাতে তেমন লাভ থাকছে না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট মাপের পিতলের খাঁড়ার দাম শুরু হচ্ছে প্রায় ২০০ টাকা থেকে, বড় প্রমাণের খাঁড়ার দাম ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যবর্তী দামে রয়েছে নানা মাপের খাঁড়া।
এখন আর শুধু খাঁড়াই নয়, পিতলের নরমুণ্ডের মালাও নবদ্বীপে তৈরি হচ্ছে। কালীমূর্তির গলায় শোভা পায় এই নরমুণ্ডের মালা। এই কাজে যুক্ত হচ্ছেন এলাকার মহিলারা। তাঁদের কথায়, “রাশ উৎসব পর্যন্ত টানা কাজ চলে। তার পরেই একটু বিশ্রাম। তবে নতুন প্রজন্ম এই কাজে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।”
কাঁচামালের দামবৃদ্ধি, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ও বাজারে কম লাভ — সব মিলিয়ে নবদ্বীপের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে। শিল্পীদের প্রশ্ন, এভাবে চললে ভবিষ্যতে কীভাবে টিকবে এই প্রাচীন শিল্প?
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন