বিধানসভা ভোটের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। তার আগেই প্রশাসন ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে নবান্ন। মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘর থেকে বিগত ১৪ বছরের উন্নয়নযাত্রার ‘রিপোর্ট কার্ড’ নিজে হাতে তুলে ধরতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দপ্তরভিত্তিক কাজের খতিয়ান, ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ এবং সম্ভাব্য নতুন ঘোষণা—সবকিছু নিয়েই প্রবল কৌতূহল রাজনৈতিক মহলে।
তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছে, আজ থেকেই মূলত বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ‘পূর্ণ মাত্রায়’ নামছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রধান অস্ত্র—উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, মহিলা সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধু, ছাত্রঋণ প্রকল্পের মতো উদ্যোগ জনমানসেও প্রবল জনপ্রিয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় বকেয়া অর্থের প্রশ্নে রাজ্য–কেন্দ্র সম্পর্ক সর্বকালের তলানিতে বলে অভিযোগ। রাজ্যের দাবি, বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন বরাদ্দ বা ভাতা বৃদ্ধি করা রাজ্যের কাছে চ্যালেঞ্জ হলেও, সরকারি সূত্র জানায়—পার্শ্বশিক্ষক, এসএসকে–এমএসকে–র প্রায় ৯২ হাজার অস্থায়ী কর্মীর বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা চলেছে। এমনকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায় কি না, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
ফলে প্রশাসনিক মহলে জোর জল্পনা—আজকের নবান্ন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কি কোনও বড় ঘোষণা করতে চলেছেন?
মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় সভা শুরু করেছেন। আজকের বৈঠক সেরেই তিনি রওনা দেবেন মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার মালদহ ও মুর্শিদাবাদে পরপর সভা। এরপর কোচবিহার সফর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জেলা সফরের আগে রাজ্যের উন্নয়নের বিশদ হিসেব তুলে ধরা মমতার একটি ‘মাস্টারস্ট্রোক’। বিজেপির প্রচারকে পালটা দিতে তিনি তথ্যকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে সকল মন্ত্রী ও দপ্তরের সচিবদের। দুপুর ১টার মধ্যে নবান্নে হাজির হওয়ার নির্দেশ গিয়েছে। নির্দেশ জারি হতেই বিভিন্ন দপ্তরে তৎপরতা বেড়েছে। বিগত ১৪ বছরের প্রকল্পভিত্তিক কাজের খতিয়ান তৈরি করতে ব্যস্ত মন্ত্রী–আমলারা। ইতিমধ্যেই দপ্তরগুলির কাছ থেকে কর্মসম্পাদনের বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়। গত ১৪ বছরে ই–গভর্ন্যান্স, অনলাইন পরিষেবা, ই–কমার্স ব্যবস্থায় রাজ্যের অর্জন ও পুরস্কারের তালিকাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয়ের হিসেবে। সরকারি তথ্য বলছে—২০১০–১১ সালে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ ছিল প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকায়—যা উন্নয়ন–রাজনীতিতে তৃণমূল সরকারের অন্যতম প্রধান ঢাল।
আজ নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রীর ‘তথ্য–আধারিত’ বক্তব্যে রাজ্যের রাজনৈতিক হাওয়া কোন দিকে বইবে, তা নিয়ে সবার চোখ এখন নবান্নের দিকে।