উত্তরবঙ্গ সফর শেষে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি উদ্বোধন করেন ১১০টি নতুন স্বয়ংসম্পূর্ণ ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা যান, যার নাম দেওয়া হয়েছে “মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট” (Mobile Medical Unit বা MMU)।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য— রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে উন্নত স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, যাতে সাধারণ মানুষ তাঁদের এলাকায় থেকেই চিকিৎসা পান।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “রাজ্যে ১৪ বছরে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছে। আগে যেসব জায়গায় চিকিৎসা ব্যবস্থা দূরের স্বপ্ন ছিল, এখন সেখানে আধুনিক পরিকাঠামো পৌঁছে গিয়েছে।”
কি থাকবে এই ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা যানে?
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, প্রতিটি মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটে থাকবে —
- একজন চিকিৎসক,
- একজন নার্স,
- একজন টেকনেশিয়ান,
- প্রয়োজনীয় ওষুধ ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম।
এই যানগুলি অত্যাধুনিকভাবে প্রস্তুত, যাতে মাঠে বা গ্রামীণ এলাকায় দাঁড়িয়েই ৩৫টি শারীরিক পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা, ইসিজি, স্পুটাম, প্রস্রাব, হিমোগ্লোবিনসহ একাধিক পরীক্ষা করা যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
প্রতিমাসে এই প্রকল্প চালাতে রাজ্য সরকারের খরচ হবে প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটের মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। অনেক রোগের চিকিৎসা হবে মাঠেই। প্রয়োজনে কাউকে রেফার করার দরকার হলে, সেই ব্যবস্থাও থাকবে।”
তিনি জানান, রাজ্যে মোট ২১০টি যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রথম দফায় উদ্বোধন করা হল ১১০টি ইউনিট, যা খুব শীঘ্রই জেলায় জেলায় পাঠানো হবে।
যে এলাকায় এই যান যাবে, আগেই সেই খবর জানিয়ে দেওয়া হবে স্থানীয় মানুষকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত ১৪ বছরে রাজ্যে স্বাস্থ্যপরিকাঠামোর ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বক্তৃতায় তিনি পরিসংখ্যানসহ তুলে ধরেন সরকারের একাধিক সাফল্য —
| খাত | সংখ্যা / পরিসংখ্যান |
| নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ | ১৪টি |
| সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল | ৪২টি |
| সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র | ১৩,৫০০+ |
| জেলা জুড়ে নতুন সিসিইউ | ৭৬টি |
| ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান | ১১৭টি |
| সরকারি হাসপাতালে নতুন বেড | ৪০,০০০+ |
| স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ | ₹৭০,০০০ কোটি |
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্যসাথী, টেলিমেডিসিন, ওষুধের দোকান, মেডিক্যাল কলেজ— প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। স্বাস্থ্য এখন বিলাসিতা নয়, মানুষের অধিকার।”
রাজ্য সরকারের দাবি, এই মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট প্রকল্প শুরু হলে দূরবর্তী পাহাড়ি, জঙ্গল বা সীমান্ত এলাকার মানুষও দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন।
প্রতিটি গাড়ি GPS-সক্ষম থাকবে এবং নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ঘুরবে।
স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতি মাসে রাজ্যের অন্তত ৩ লক্ষ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।