বন্যা ও ধস-বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পরিদর্শনে টানা দ্বিতীয় দিনও পাহাড়ে রইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নাগরাকাটায় আহত হন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। ইটের আঘাতে গুরুতর চোট পান তিনি, বর্তমানে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার দুপুরে সেই হাসপাতালেই পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। দেখা করেন আহত সাংসদের সঙ্গে এবং কথা বলেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। চিকিৎসকদের কাছ থেকেও নেন শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত রিপোর্ট।
বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান,“বিজেপি সাংসদের অবস্থা স্থিতিশীল। উনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, সবরকম সাহায্য করা হবে।”
রবিবার নাগরাকাটায় বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে আক্রান্ত হন সাংসদ খগেন মুর্মু ছাড়াও শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যর্থতার কারণেই এই হামলা। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এটি রাজনৈতিক নয়, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ফল।

চোখের হাড় ভেঙেছে সাংসদের
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাংসদের চোখের নিচের হাড় ভেঙে গিয়েছে, প্রয়োজন হতে পারে অস্ত্রোপচারের। বর্তমানে তিনি আইসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। রক্তচাপ ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
মিরিক ও দুধিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী, ত্রাণশিবিরে দুর্গতদের পাশে
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বেহাল উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি ও ধসে বহু রাস্তা ও সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়েছে একাধিক জনপদ। সোমবার নাগরাকাটার পর মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যান মিরিক ও দুধিয়া এলাকায়। দুপুরে দুধিয়ার ত্রাণশিবিরে পৌঁছে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, “ধসে ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলির মেরামত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন। কাজ শেষ করার জন্য ১৫ দিন সময় দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই দার্জিলিং-মিরিক সংযোগকারী দুধিয়া ব্রিজের মেরামতি শুরু হয়েছে, এবং তিনি নিজে গিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।
ভাঙা ঘর পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রীর
ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে, সেগুলি রাজ্য সরকার তৈরি করে দেবে। কোনও পরিবার গৃহহীন থাকবে না।”
তিনি আরও নির্দেশ দেন—যাদের আধার, ভোটার, প্যান কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়েছে, তাদের দ্রুত নতুন নথি তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রাণশিবিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এক তরুণীর শরীরের ক্ষত নিজে পরীক্ষা করেন। তরুণী জানান, ধসের সময় আঘাত পান তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন যাতে তাঁকে অবিলম্বে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং ক্যাম্পে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রাখা হয়।
তিনি বলেন, “মানুষের মাথার উপর থেকে ছাদ উড়ে গেছে, কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না। কমিউনিটি কিচেন অন্তত এক মাস চালাতে হবে।”ধসে বিধ্বস্ত পাহাড়ে প্রশাসনিক তৎপরতা যেমন চলছে, তেমনি দেখা মিলছে মানবিকতারও। আক্রান্ত সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে এবং দুর্গতদের পাশে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন—“বিপদে রাজনীতি নয়, একসঙ্গে লড়াই করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ।”