মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কোণঠাসা করতে কেন্দ্র নিত্য নতুন অজুহাত খুঁজছে—তৃণমূলের এই অভিযোগ ফের আরও শক্ত ভিত্তি পেল রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শত্রুঘ্ন সিনহার পৃথক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী লিখিতভাবে জানান, জমিজটের কারণে রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো প্রকল্প বন্ধ বা কার্যত স্থগিত হয়ে রয়েছে। তাঁর দাবি, নিউ বারাকপুর–বারাসত মেট্রো প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি থমকে আছে জমি না-মেলায়। বরানগর–বারাকপুর মেট্রোর ক্ষেত্রেও একই ছবি—২০১২ সাল থেকে কলকাতা পুরসভার জল পাইপলাইন সরানোর উদ্যোগ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ মেলেনি, ফলে প্রকল্প এগোচ্ছে না।
এতেই শেষ নয়। রেলমন্ত্রী জানান, জোকা–এসপ্ল্যানেড মেট্রোর অন্তর্গত মাঝেরহাট–এসপ্ল্যানেড অংশের কাজও জমিজটের কারণে অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। খিদিরপুর মেট্রো স্টেশনের জমির অনুমোদন পেতে পাঁচ বছর লেগেছে, আর ডাঃ বি সি রায় মার্কেট এলাকার জমিজট সাড়ে তিন বছরেও কাটেনি। একইভাবে বেলেঘাটা–দমদম বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পে কাজ পিছিয়ে রয়েছে চিংড়িঘাটায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ অনুমতি না-মেলায়। রেলমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, প্রায় প্রতিটি বড় প্রকল্পেই রাজ্য সরকারের নোডাল অনুমতি বা জমি হস্তান্তর না হওয়াই অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়।
এ দিন রেলমন্ত্রী আরও দাবি করেন, ১৯৭২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ৪২ বছরে কলকাতায় মাত্র ২৮ কিমি মেট্রোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল, যেখানে মোদি সরকারের ১১ বছরে ৪৫ কিমি মেট্রোর পরিষেবা চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় এই তুলনা স্বাভাবিকভাবেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্র বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বারবার প্রকল্পে টাকা আটকে দিচ্ছে এবং এখন সেই ব্যর্থতার দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। মালা রায়ের স্পেশাল ট্রেন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে রেলের দেওয়া তথ্যেও অনেকে কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণের ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবচ’ সুরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে রেল যে অস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে, তাতেও রাজ্যের আশঙ্কা বেড়েছে যে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে রেল আন্তরিক নয়। ফলে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত আরও চড়ছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। রেলমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে বাংলার মেট্রো প্রকল্পগুলির অনিশ্চয়তা আবারও সামনে এসেছে, এবং তা ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক তরজা তীব্র হয়েছে।