গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই ‘গুরুদেব’-প্রদত্ত সম্মানসূচক নাম নিয়েও কি বিজেপি নেতৃত্বের অস্বস্তি? বন্দেমাতরম বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই সেই প্রশ্ন নতুন করে উঠে এল রাজনৈতিক মহলে। কারণ, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের পোশাকি নাম থেকে এবার ‘মহাত্মা গান্ধী’ শব্দবন্ধ ছেঁটে ফেলল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। পরিবর্তে প্রকল্পের নতুন নাম অনুমোদন পেল—‘পূজ্য বাপু গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা যোজনা’।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে চালু হয়েছিল ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা যোজনা’ বা এমএনআরইজিএ। ২০০৫ সালে জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা আইন (এনআরইজিএ) প্রণয়ন করে বছরে অন্তত ১০০ দিনের নিশ্চিত কাজের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরে ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার এই প্রকল্পটি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর নামে উৎসর্গ করে। সেই ঐতিহাসিক নামকরণই এবার বদলে দিল মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনে প্রকল্পের নাম থেকে বাদ গেল ‘মহাত্মা’, যুক্ত হল নতুন দুই শব্দ—‘পূজ্য বাপু’।
তবে শুধু নাম বদলেই থেমে থাকছে না কেন্দ্র। সরকারি সূত্রে খবর, প্রকল্পের কাঠামোতেও আসছে একাধিক পরিবর্তন। বছরে ন্যূনতম কাজের দিন ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করার প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি সংশোধিত ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ২৪০ টাকা করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, এই পরিবর্তনে গ্রামীণ কর্মসংস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়বে।
রাজনৈতিক মহলে যদিও নাম পরিবর্তন নিয়েই বিতর্ক তুঙ্গে। বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ‘মহাত্মা গান্ধী’ নামটি কেন বাদ দেওয়া হল? রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সেই ঐতিহাসিক উপাধি কি আদৌ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে? যদিও বিজেপির একাংশের যুক্তি, ‘পূজ্য বাপু’ নামেও গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধাই প্রকাশ পাচ্ছে।
বর্তমানে দেশজুড়ে এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ। তাঁদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই মহিলা। গ্রামীণ ভারতের প্রশিক্ষণহীন ও অর্ধদক্ষ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানের অন্যতম ভরসা এই প্রকল্প। নাম ও কাঠামো বদলের ঘোষণায় একদিকে যেমন কেন্দ্র উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছে, অন্যদিকে তেমনই ‘মহাত্মা’ শব্দ বাদ যাওয়ায় নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের আগুনে ঘি পড়ল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।