প্রথম পাতা খবর এসআইআর-এর চাপে নদিয়ায় আত্মঘাতী বিএলও, সুইসাইড নোটে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করলেন রিঙ্কু তরফদার

এসআইআর-এর চাপে নদিয়ায় আত্মঘাতী বিএলও, সুইসাইড নোটে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করলেন রিঙ্কু তরফদার

9 views
A+A-
Reset

বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সংক্রান্ত কাজের অতিরিক্ত চাপ আরও এক জন বুথ স্তরের আধিকারিকের (বিএলও) প্রাণ কেড়ে নিল। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে আত্মঘাতী হলেন রিঙ্কু তরফদার (৫১)। শনিবার সকালে কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলায় ভাড়াবাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতার দেহের পাশ থেকেই একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়, যেখানে নিজের মৃত্যুর জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন তিনি।

বাঙালঝি এলাকার স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের পার্শ্বশিক্ষিকা এবং ওই অঞ্চলের বিএলও ছিলেন রিঙ্কু। সুইসাইড নোটে তিনি লেখেন, “আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। অমানুষিক কাজের চাপ আর নিতে পারছি না। আমি সাধারণ মানুষ, কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। পার্শ্বশিক্ষিকা হিসেবে বেতনও খুব কম। তবু আমাকে ছাড় দেওয়া হল না।”

নোটে তিনি স্পষ্ট করেন, তাঁর স্বামী, ছেলে, মেয়ে—কেউই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী নন। “আমি বাঁচতে চাই। সংসারে কোনও অভাব নেই,”—লিখেছেন রিঙ্কু।

ডিজিটাল আপলোড ও অনলাইন কাজ নিয়ে তাঁর অসহায়তার কথাও উঠে এসেছে নোটে। লিখেছেন, “অফলাইনের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। কিন্তু অনলাইনের কাজ কিছুই জানি না। সুপারভাইজারকে জানিয়েও লাভ হয়নি। কাজ তুলে না-দিতে পারলে যে প্রশাসনিক চাপ আসবে, তা নিতে পারব না।”

মৃতার স্বামী অসীম তরফদার বলেন, “ফর্ম বিলি ঠিক সময়ে করেছে। কিন্তু ডিজিটাল কাজ জানত না। বার বার জানানো সত্ত্বেও কোনও সাহায্য করেনি প্রশাসন। এটা আত্মহত্যা নয়, কমিশনের দ্বারা হত্যা।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও রাজ্য জুড়ে ক্ষোভ

এই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তৃণমূল। দলটি সমাজমাধ্যমে লিখেছে, “নির্বাচন কমিশনের অবাস্তব সময়সীমা, জটিল ডিজিটাল প্রক্রিয়া ও রাতভর তদারকির নামে মানসিক নির্যাতন—এসবই কর্মীদের মৃত্যুর কারণ। আর বিজেপি শুধু রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত।”

দিন কয়েক আগেই পূর্ব বর্ধমানে ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হয় বিএলও নমিতা হাঁসদার। জলপাইগুড়ির মাল ব্লকে শান্তিমুনি ওঁরাও-এর ঝুলন্ত দেহও উদ্ধার হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই পরিবারের অভিযোগ—কাজের চাপই মৃত্যুর কারণ। এসআইআর-এর কাজ করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন হুগলির কোন্নগরের এক বিএলও।

এই ধারাবাহিক মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন। অভিযোগ, কমিশনের ‘অপরিকল্পিত কাজের ধারা’ই ভোগাচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের। তিনি এসআইআর-এর কাজ বন্ধ রাখার জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছেন।

রাজ্যে উদ্বেগ বাড়ছে

একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় বিএলওদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং মানসিক চাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজ্য জুড়ে। ভোটার তালিকা সংশোধনের এই পর্ব যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দাবি—কাজের চাপ কমাতে এবং ডিজিটাল ব্যবস্থায় সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে দ্রুত।

সূত্র: আনন্দবাজার

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.