প্রথম পাতা খবর বিহার ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ল প্রশান্ত কিশোরের পূর্বাভাস; জন সুরাজের ভরাডুবিতে প্রশ্ন উঠল কৌশলের সাফল্য নিয়ে

বিহার ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ল প্রশান্ত কিশোরের পূর্বাভাস; জন সুরাজের ভরাডুবিতে প্রশ্ন উঠল কৌশলের সাফল্য নিয়ে

55 views
A+A-
Reset

২০২০ সালের ডিসেম্বরেও প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) ঠিকই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন—বাংলায় বিজেপি একশোর উপরে যাবে না। মিলেও ছিল তাঁর পূর্বাভাস। কিন্তু পাঁচ বছর পর বিহার নির্বাচনে এসে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণ ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো। ভোটের আগে তিনি দাবি করেছিলেন—“জেডিইউ পঁচিশের বেশি আসন পাবে না, নীতীশ কুমার আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন না।” বাস্তবে তার কিছুই হলো না।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে—পিকের দল জন সুরাজ পার্টি রাজ্যে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারল না। নিজে জেতা তো দূরস্ত—অন্য দলের জয়ের গতিও থামাতে পারল না। রাজনৈতিকভাবে পিকে যেন হয়ে উঠলেন জলহীন মাছ—বিশেষজ্ঞতার জমিতে সফল, কিন্তু মাঠে নেমে ব্যর্থ।

ধুমধাম করে রাজনীতিতে প্রবেশ, ফল হতাশাজনক

ভোটকুশলী হিসেবে তারকা খ্যাতি নিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। বিহারের গ্রামে গ্রামে তিন বছরের পদযাত্রা, কর্পোরেট মডেলে দল গঠন, কোটি কোটি টাকার সভা–সমিতি, পেশাদার প্রচারক, পরিযায়ী বিহারীদের আলাদা প্রচারদল—সব মিলিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক মডেল উপস্থাপন করেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম এবং জনসভায় নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন পিকে।

কিন্তু সবটাই কার্যত ভেস্তে গেল ভোটের ফলে। বাস্তবতা স্পষ্ট—বিহারের মতো জটিল রাজ্যে শুধুই সোশ্যাল মিডিয়া-চালিত রাজনীতি কার্যকর হয় না।

‘তৃতীয় শক্তি’ হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেল

এনডিএ বনাম মহাজোটের প্রচলিত লড়াইয়ের মাঝে নিজেকে তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। জাতপাতের ক্লিষ্ট রাজনীতিতে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখালেও তা ছিল মূলত সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারে সীমাবদ্ধ।

বিহারের বাস্তব রাজনীতি অনেক কঠিন—এবার সেই পাঠই পেলেন প্রশান্ত কিশোর।

ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদল—বিশ্বাস হারাল জনসুরাজ

ভোটের আগে পিকে একাধিক ‘নৈতিক’ ঘোষণা করেছিলেন—

  • অন্য দলের কাউকে নেবেন না
  • দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকে টিকিট দেবেন না
  • দলের প্রথম সভাপতি হবেন দলিত

কিন্তু ভোট এগোতেই সব প্রতিশ্রুতিই ভেঙে ফেললেন তিনি। তাতে জনসুরাজের বিশ্বাসযোগ্যতা কোপ খায়।

সবচেয়ে বড় কৌশলগত ভুল—নিজে ভোটে না লড়া

প্রশান্ত কিশোর আগেও বহু নেতা–নেত্রীকে বলেছেন—নেতৃত্ব দিতে চাইলে ভোটে নামতে হবে। নন্দীগ্রামের মতো কঠিন আসনে লড়াইয়ের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো সিদ্ধান্ত—তিনি নিজে কোনও আসন থেকে প্রার্থীই হলেন না।
এই সিদ্ধান্ত জনসুরাজের ক্ষুদ্র যে সম্ভাবনা ছিল, তাও নষ্ট করে দিয়েছে।

বিহারের রাজনীতির বাস্তবতা—তিন বছর যথেষ্ট নয়

বিহারে রাজনীতি করতে গেলে লাগে—

  • জাতপাতের শক্তিশালী সংগঠন
  • তৃণমূলে নেটওয়ার্ক
  • ভোট টানার মতো সামাজিক প্রভাব
  • এবং স্থানীয় ক্ষমতাশালী নেতাদের সমর্থন

শুধু কর্পোরেট ছক, বড় বড় সভা ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার দিয়ে বিহারে দল দাঁড় করানো যায় না।
লালুপ্রসাদ যাদব বা নীতীশ কুমার—কেউই এক-দু’বারের চেষ্টায় সফল হননি।
পিকের তিন বছরের পরিশ্রম, বিহারের রাজনৈতিক বাস্তবে খুব কম সময়ই।

আগামী দিন—পিকের পথ কোনদিকে?

জনসুরাজের ভরাডুবির পর প্রশ্ন উঠেছে—প্রশান্ত কিশোর কি রাজনীতি ছাড়বেন? নাকি আবার নতুন করে সংগঠন দাঁড় করিয়ে ‘বিহার বদলাও’ অভিযানে ফিরে আসবেন?

ফলাফল একটাই বার্তা দিচ্ছে—
ভোট কুশলী হওয়া আর রাজনীতিতে সফল হওয়া—দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জগত।
এখন দেখার, পিকে কোন পথে হাঁটেন।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.