বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিল সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ শুনানির শেষে সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে দেশছাড়া হওয়ার পর থেকে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিল। গুরুতর অভিযোগগুলির মধ্যে ছিল বিপ্লবী ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ, নাগরিকদের উপর নির্মম দমন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ‘আয়নাঘর’ সংক্রান্ত নানা অভিযোগ। এদিন আদালত হাসিনাকে এই অভিযোগগুলির জন্য দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায় ঘোষণা হতেই আদালতকক্ষে হাততালি পড়ে যায়, যদিও বিচারপতিরা উপস্থিত সকলকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।
এদিন শুনানিতে বিচারপতিদের ট্রাইব্যুনাল জানায়, হাসিনার বিরুদ্ধে যে ফোনকলের রেকর্ড প্রমাণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে, তা এআই-নির্মিত নয় এবং তা যথার্থ। আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন একযোগে ছাত্রদের আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করেছিলেন। আদালতের মতে, হাসিনা নিজেই প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং পুলিশকে সক্রিয় না থাকার নির্দেশও জারি করেছিলেন, যা বিস্তৃত দমন-পীড়নের পথ খুলে দেয়।
হাসিনা ছাড়াও এই মামলায় প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অভিযুক্ত, প্রাক্তন পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন শুরুতে গ্রেফতার হলেও পরে রাজসাক্ষী হয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁর সহযোগিতার কারণে তাঁকে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং দুই গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত হাসিনা ও আসাদুজ্জামান বহুবার পরোয়ানা জারি সত্ত্বেও আত্মসমর্পণ করেননি। বিচারকদের মতে, তাঁদের ভূমিকা ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কঠোর শাস্তি প্রয়োজনীয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে আওয়ামি লিগ আগেই জানিয়ে রেখেছিল, এই বিচারের কোনও বৈধতা নেই। তাদের অভিযোগ, এটি একটি ‘জামাত-প্রভাবিত ক্যাঙারু কোর্ট’, যেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই এবং বিচার প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তবে আদালত পরিষ্কার জানায়, আইনি প্রক্রিয়া ও সাক্ষ্যপ্রমাণ বিচার করেই রায় দেওয়া হয়েছে, কোনওভাবেই তা রাজনৈতিক নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ এখন সম্পূর্ণভাবে এই রায়ের উপর নির্ভর করছে, যদিও তিনি ও অন্য অভিযুক্তেরা এখনও পলাতক।