ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে আতঙ্ক এখন রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে আত্মহত্যার ঘটনায় রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতেই ফের এক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল বীরভূমে। অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে ৯৫ বছরের এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বীরভূমের ইলামবাজারের স্কুলবাগান সুভাষপল্লির একটি বাড়ি থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় ক্ষিতীশ মজুমদার নামে ওই বৃদ্ধের দেহ। তিনি আসলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোতোয়ালি থানা এলাকার কোরা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গত পাঁচ-ছ’মাস ধরে ইলামবাজারে মেয়ের বাড়িতে থাকছিলেন।
গত কয়েক দিন ধরে এসআইআর বা ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে আতঙ্কে ভুগছিলেন ক্ষিতীশবাবু। পরিবারের সদস্য নির্মলা মজুমদার জানান, “২০০২ সালের ভোটার তালিকায় দাদুর নাম ছিল না। অনেক বছর আগে ও পার থেকে এসেছিলেন আমাদের দাদুরা। তখন অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। ভয় পাচ্ছিলেন, এই বুড়ো বয়সে যদি আবার ও পারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে কী হবে?”
পরিবারের দাবি, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং ক্রমাগত আতঙ্কে থাকায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ক্ষিতীশবাবু।
বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাঁর নাম ক্ষিতীশ মজুমদার। তিনি ইলামবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, এসআইআর আতঙ্কই কারণ। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।”
এর আগেই মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির প্রদীপ কর আত্মহত্যা করেছিলেন, যাঁর উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে লেখা ছিল—“এসআইআরের কারণে আমি ভয় পাচ্ছি”। সেই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি।
এর মধ্যেই বুধবার কোচবিহারের দিনহাটায় এক ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নামের বানান ভুল ছিল, তা নিয়েই আতঙ্কে ছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক মহল বলছে, এসআইআর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্পষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বারবার আশ্বাস দিলেও, আতঙ্ক কাটছে না ভোটারদের মনে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও বা নামের বানান ভুল হলেও আতঙ্কের কিছু নেই। প্রতিটি বৈধ ভোটারের নাম নিশ্চিতভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবুও এই ঘটনাগুলি প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।