দেবারতি ঘোষ: সঙ্গীতাচার্য পণ্ডিত অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তথ্যচিত্র বানাতে উদ্যোগ নিয়েছেন ওঁর শিষ্যা নন্দিনী চক্রবর্তী। তথ্যচিত্রটির নাম ‘চরৈবেতি’। পরিচালনায় মৃন্ময় নন্দী। তথ্যচিত্রটি ৬ই এপ্রিল, নন্দন ৩ প্রেক্ষাগৃহে পরিবেশিত হল।
৯৬ বছরে পা দিয়েছেন সঙ্গীতাচার্য। আজীবন বিষ্ণুপুর ঘরানায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাধনা করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর অন্যতম শিষ্য পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। তাঁর ‘মাস্টারমশাই’কে নিয়ে তথ্যচিত্র হয়েছে বলে স্বাভাবিকভাবেই খুশি তিনি। নন্দনে তিনি উপস্থিতও ছিলেন।
অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাস্টারমশাইদের মত গুণী মানুষদের কাজ যত বেশি করে সংরক্ষণ করা যাবে তত ভাল। একজন সুসংস্কৃতির মানুষ বলতে যা বোঝায় মাস্টারমশাই একেবারেই তাই। আমি খুব খুশি।’’ অজয় চক্রবর্তী ছাড়া উপস্থিত ছিনেল পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, পন্ডিত কুমার বোস, শ্রীকান্ত আচার্য এবং চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু গুণী শিল্পীর কাজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। অমিয়বাবুর মত অত্যন্ত উঁচুমাপের সঙ্গীতজ্ঞকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানাবার প্রয়োজন ছিল। এঁদের মতো বিরাট মাপের শিল্পীদের কাজ সংরক্ষণ না করলে আমাদেরই ক্ষতি। তাই এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।”
এই তথ্যচিত্র বানাবার জন্য প্রযোজক নন্দিনী চক্রবর্তীকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য, তেজেন্দ্রনারায়ণ এবং কুমার বোস। ওঁরা প্রত্যেকেই খুশি।
‘চরৈবেতি’ তথ্যচিত্রটি অমিয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জীবনাদর্শের সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে মিলে যায়। শিষ্যা এবং প্রযোজক নন্দিনী চক্রবর্তীর কথায় ‘গুরুজীর জন্ম ১৯২৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ৯৫ পার করে তিনি আজ ৯৬ এর কোঠায়। বয়সকে সংখ্যামাত্র বানিয়ে তিনি এখনো নিয়মিত রেয়াজ করেন, ক্রমাগত সংশোধন ও সম্মার্জনের মাধ্যমে নিজের সৃষ্টিকে আরও পরিশীলিত করে তোলেন, অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের যুগপৎ বিস্মিত ও মুগ্ধ করেন সুরের মূর্ছনায়, অনায়াস দ্রুত তানে।
আত্মসংযম, নিয়মানুবর্তিতা, মার্জিত ব্যবহার, প্রচার বিমুখতা এই স্নিগ্ধ মানুষটির একান্ত বৈশিষ্ট্য। বিগত চল্লিশ বছর ধরে শিষ্যা হিসেবে অত্যন্ত কাছ থেকে তাঁকে দেখছি আমি, আর তাই এই মানুষটির জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজন অনুভব করেছি, যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক হবে বলেই মনে করি।‘‘আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রমী এই সঙ্গীতবিদ্ মানুষটির সাঙ্গীতিক যাত্রার কোনো বিরাম নেই। তাই এই ‘চরৈবেতি’।