দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে পিঁয়াজ সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের পড়তে হত বিপাকে। জমি থেকে তোলা পিঁয়াজ সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তা তাড়াহুড়ো করে বিক্রি করতে হত। ফলে সঠিক দাম না পেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তেন চাষিরা, আর রাজ্যের জোগান ঘাটতিতে নাসিকের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ত।
এই পুরনো সমস্যারই এবার সমাধান হতে চলেছে। রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের উদ্যোগে তৈরি হবে ৭৭৫টি পিঁয়াজ সংরক্ষণ গোলা, যার জন্য রাজ্য সরকার সরাসরি ভর্তুকি দেবে।
সোমবার হুগলি সার্কিট হাউসে কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা শাসক তরুণ ভট্টাচার্য, সভাধিপতি রঞ্জন ধারা, জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মদন মোহন কোলে ও কৃষি দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকরা।
মন্ত্রী জানান, “আমাদের আমলে পিঁয়াজ চাষ অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের সমস্যা ছিল। এবার গোলা তৈরি হলে কৃষকেরা তাঁদের পিঁয়াজ সঠিকভাবে রাখতে পারবেন। এতে কৃষক যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই ক্রেতারাও সারা বছর সুলভ দামে পিঁয়াজ পাবেন।”
হুগলি জেলায় মোট ৩৫২ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১৭৫ জনকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে, যাঁরা প্রত্যেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে সরকারি ভর্তুকি পাবেন পিঁয়াজ গোলা তৈরির জন্য।
রাজ্যের ১০টি পিঁয়াজ উৎপাদক জেলায় মোট ৭৭৫টি গোলা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গিয়েছে, বলাগড়, আরামবাগ, চন্দননগর, বর্ধমান ও নদিয়ার মতো অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি শুরু হবে।
উল্লেখ্য, আলুর মতো পিঁয়াজ হিমঘরে সংরক্ষণ করা যায় না, কারণ আর্দ্রতার কারণে দ্রুত পচে যায়। তাই রাজ্য কৃষি বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে এর বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। হুগলির বলাগড়ে সুখসাগর প্রজাতির পিঁয়াজ সংরক্ষণের প্রয়োগমূলক পরীক্ষা হলেও তেমন সফলতা মেলেনি। এবার আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি গোলায় সংরক্ষণের মাধ্যমে পিঁয়াজের পচন রোধ করা সম্ভব হবে বলেই আশা কৃষি দপ্তরের।
কৃষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে পিঁয়াজ চাষের লাভজনকতা বাড়বে, এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও অনেকটাই কমবে।