প্রথম পাতা প্রবন্ধ ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভগৎ সিংকে বাঁচালেন বীরাঙ্গনা দুর্গা ভাবী! কে তিনি? জানুন স্বাধীনতার আড়ালে এক অজানা ইতিহাস

ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভগৎ সিংকে বাঁচালেন বীরাঙ্গনা দুর্গা ভাবী! কে তিনি? জানুন স্বাধীনতার আড়ালে এক অজানা ইতিহাস

19 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ব্রিটিশ পুলিশের কাছে খবর ছিল — পাঞ্জাব থেকে হাওড়াগামী একটি ট্রেনে কয়েকজন সশস্ত্র বিপ্লবী আসছেন। তাই স্ববেশে ও ছদ্মবেশে ব্রিটিশ গোয়েন্দা পুলিশ ঘিরে ফেলল হাওড়া স্টেশনের চত্বর। ট্রেন আসতেই শুরু হলো কঠোর তল্লাশি। সন্দেহভাজন কাউকে পেলেই শুরু জিজ্ঞাসাবাদ।

এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই স্টেশনে নামলেন এক ইংরেজ যুবক, তার স্ত্রী এবং দু’জন ভৃত্য। পুলিশ তাঁদের দেখে সেলাম ঠুকল— “সেলাম হুজুর!”— এবং কোনও সন্দেহ না করেই তাঁদের ছেড়ে দিল। কিন্তু সেই ইংরেজ দম্পতি আর ভৃত্যরা ছিলেন আসলে ব্রিটিশ শাসকদের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া বিপ্লবী ভগৎ সিং, বীরাঙ্গনা দুর্গা দেবী ও বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত! দু’জন ভৃত্যের একজন ছিলেন বিপ্লবী ভগবতীচরণ ভোরা, যিনি দুর্গা দেবীর স্বামী।

এই ছদ্মবেশে পালানোর ইতিহাসে শুরু করেছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। তাঁর পথেই হেঁটেছিলেন ভগৎ সিং ও তাঁর সহযোদ্ধারা।

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার পর ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, দুর্গা দেবী ও ভগবতীচরণ পালিয়ে আসেন বাংলার বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনায়, যেখানে বটুকেশ্বর দত্তের গ্রামের বাড়ি। কারণ তাঁরা তখনই ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট জন পি. স্যান্ডার্সকে হত্যা করে পালিয়ে এসেছিলেন।

দুর্গা দেবীর সাহস ছিল অনন্য। ব্রিটিশ পুলিশ কখনও তাঁকে ধরতে পারেনি। প্রতিহিংসায় তাঁর বাড়িঘর বাজেয়াপ্ত করেছিল ব্রিটিশ শাসন, কিন্তু তাতেও তিনি দমে যাননি।

ভগৎ সিংয়ের ফাঁসির আদেশ রদ করতে দুর্গা দেবী আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীর কাছে। কিন্তু গান্ধীজি তা ফিরিয়ে দেন — ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়।

১৯০৭ সালে এলাহাবাদের শাহজাদপুরে জন্ম নেওয়া দুর্গা দেবী অল্প বয়সেই বিয়ে করেন বিপ্লবী ভগবতীচরণ ভোরাকে। তিনি ‘হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘নওজোয়ান ভারত সভা’-র সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুর্গা দেবী সরকারের কাছ থেকে কোনও সুবিধা নেননি। জীবনের শেষ পর্বে গাজিয়াবাদে গরিব শিশুদের জন্য একটি স্কুল চালাতেন। দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী, তবু তাঁর তেজ ও আত্মসম্মান অটুট ছিল শেষদিন পর্যন্ত।

১৯৯৯ সালের ১৫ অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বীরাঙ্গনা।
আজকের স্বাধীন ভারতের মানুষ হয়তো অনেকেই জানেন না তাঁর নাম— দুর্গা দেবী, যিনি বিপ্লবীদের কাছে ছিলেন ‘দুর্গা ভাবী’।

তিনি বলতেন— দেশের জন্য নিজের অবদান কোনও ত্যাগ নয়, এটি তাঁর পবিত্র কর্তব্য।
স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রীমা সারদা ছিলেন তাঁর জীবনের প্রেরণা।
হে বীরাঙ্গনা দুর্গা ভাবী, তোমায় ভুলি কেমনে!

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.