সুন্দরবনের বুক থেকে এক নতুন ইতিহাস রচিত হলো। সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে ভেঙে রিয়া সর্দার এবং রাখী নস্কর একে অপরের সঙ্গে জীবনের পথচলা শুরু করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার রিয়া ও কুলতলির বকুলতলার বাসিন্দা রাখীর এই সমলিঙ্গ বিবাহ এখন গোটা বাংলার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
তাঁদের এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য সোমবার কুলতলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভাতেই ফোনে নববিবাহিত যুগলকে শুভেচ্ছা জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিষেক বলেন, “সুন্দরবনের মাটি থেকে এক অনন্য ইতিহাস রচিত হয়েছে। রিয়া ও রাখী প্রমাণ করেছেন, ভালবাসা কোনও ধর্ম, লিঙ্গ বা সমাজের নিয়মে আবদ্ধ নয়। ভালবাসা মানেই মানবতা।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের সাহস, নিষ্ঠা ও ভালবাসা আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ শুধু কুলতলির গর্ব নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার, বাংলার এবং গোটা দেশের গর্ব।”
সোমবারের সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল, মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সভায় নবদম্পতিকে ফুল ও শুভেচ্ছা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা সরাসরি সম্প্রচারিত হয় সামাজিক মাধ্যমে। পরে তিনি নিজের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেন, যেখানে রিয়া-রাখীর বিবাহ ও গ্রামবাসীর সাহসিকতাকে “বাংলার মানবিকতার জয়” বলে বর্ণনা করেন।
ফোনে অভিষেক বলেন,“আমাদের সমাজের চেনা ছকের বাইরে গিয়ে রিয়া ও রাখী দেখিয়ে দিয়েছে ভালবাসার আসল অর্থ। তারা বুঝিয়েছে, ভালবাসা কোনও বন্ধনে, ধর্মে, লিঙ্গে বা নিয়মে সীমাবদ্ধ নয়।”
তাঁর আরও সংযোজন,“গ্রামবাসীরা যে মানবিকতার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটাই আমাদের গর্ব। আপনারা প্রমাণ করেছেন, সুন্দরবনের মানুষ শুধু প্রকৃতির সন্তান নয়, হৃদয়ের দিক থেকেও অনেক বড়।”
অভিষেক আশ্বাস দেন, তিনি শীঘ্রই কুলতলির ওই গ্রামে যাবেন এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন। গ্রাম উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সমলিঙ্গ বিবাহের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন ‘খোলামেলা ও মানবিক অবস্থান’ সাম্প্রতিক রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ। যেখানে বিজেপি ও তাদের মিত্ররা এই বিষয়ে বরাবরই রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছে, সেখানে অভিষেকের বক্তব্য সমাজে এক ভিন্ন বার্তা বহন করছে।
রাজনীতির বাইরেও এই পদক্ষেপ সামাজিক সচেতনতার দিক থেকে বড় মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিষেক বলেন,“তোমাদের ভালবাসা যেন আরও গভীর হয়, আরও দৃঢ় হয়। তোমাদের জীবন হোক আনন্দ, সম্মান, সম্প্রীতি ও শান্তিতে ভরা।”
রিয়া ও রাখীর সাহসকে কুর্নিশ জানিয়ে তৃণমূল নেতা বলেন, “এই ভালবাসার গল্প ছড়িয়ে পড়ুক গোটা বাংলায়। এটা মানবতার জয়।”