প্রথম পাতা খবর “জ্ঞানেশের হাতে রক্ত লেগে আছে!”—এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে বিস্ফোরক তৃণমূল, পাঁচ দফা প্রশ্নে চাপে কমিশন

“জ্ঞানেশের হাতে রক্ত লেগে আছে!”—এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে বিস্ফোরক তৃণমূল, পাঁচ দফা প্রশ্নে চাপে কমিশন

9 views
A+A-
Reset

এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও চড়ে গেল। এত দিন সাংবাদিক বৈঠক ও জনসভায় ক্ষোভ প্রকাশের পর শুক্রবার সরাসরি দিল্লির নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে হাজির হয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। বৈঠকে তৃণমূল সাংসদেরা স্পষ্ট বলেছেন, “জ্ঞানেশ কুমারের হাতে রক্ত লেগে আছে। তাঁর কারণেই এত মৃত্যু, এত উৎকণ্ঠা।” তৃণমূলের দাবি—এসআইআর আতঙ্কে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের তালিকা এবং ‘চাপ’ নিতে না-পেরে প্রাণ হারানো বেশ কিছু বিএলও-র নাম-সহ দুই তালিকাই কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’ দফায় চিঠি লিখে এসআইআর প্রক্রিয়াকে ‘অপরিকল্পিত’ বলে তোপ দাগলেন। সেই চিঠির জবাবে কমিশন শুক্রবার তৃণমূল প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে। ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডেরেক ও’ ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, দোলা সেন সহ একাধিক সাংসদ। বৈঠক শেষে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, “আমরা পাঁচটি প্রশ্ন তুলেছি, তার একটিরও সদুত্তর দিতে পারেননি কমিশনের কর্তারা।”

তৃণমূলের মূল অভিযোগ—এসআইআর প্রক্রিয়ার ছদ্মবেশে বাংলা ও বাঙালিকে নিশানা করা হচ্ছে। দলটির পাঁচ দফা প্রশ্নের প্রথমটিই ছিল—এসআইআর কি আসলে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের জন্য, নাকি নির্দিষ্টভাবে বাংলাকে টার্গেট করার উদ্দেশ্যে? তাদের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ শনাক্ত করাই উদ্দেশ্য হয়, তবে কেন বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত-লাগোয়া অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও অরুণাচলপ্রদেশে একই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে না? কেন শুধুই পশ্চিমবঙ্গকে বেছে নেওয়া হল?

দ্বিতীয় প্রশ্ন—যদি ২০২৪ সালের ভোটার তালিকায় অবৈধ ভোটার থাকে, তবে সেই ভোটে নির্বাচিত সরকার কীভাবে ক্ষমতায় থাকে? তৃতীয়ত, বিহারে এসআইআর চালিয়ে কতজন ‘বিদেশি’ বা ‘অনুপ্রবেশকারী’ শনাক্ত হয়েছে—তার তথ্য কোথায়? চতুর্থ প্রশ্ন—বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে দাবি করছেন, এসআইআরের পরে বাংলার ভোটার তালিকা থেকে এক কোটির বেশি নাম বাদ যাবে। তাঁদের কাছে এই তথ্য এল কোথা থেকে? তৃণমূলের অভিযোগ—যদি বিজেপি আগে থেকেই জানে কত নাম বাদ যাবে, তবে নির্বাচন কমিশন কি বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় পরিণত হয়েছে? শেষ প্রশ্ন—এসআইআর আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ও বিএলও-র মৃত্যুর দায় নেওয়া হবে কার?

কমিশন কোনও প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দেওয়ায় তৃণমূলের ক্ষোভ আরও বাড়ে। তৃণমূলের প্রতিনিধিদল ফের দাবি তোলে—এসআইআর প্রক্রিয়া অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। এই দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন।

এদিকে, এসআইআর নিয়ে একাধিক মামলা একত্রে শুনছে সুপ্রিম কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তবে জানিয়েছে, আগামী ৯ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বক্তব্য শোনা হবে। কিন্তু সেই দিনেই প্রকাশিত হবে এসআইআরের খসড়া ভোটার তালিকা—নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে। ফলে আদালতের শুনানির আগেই প্রথম ধাপ শেষ হবে, যা নিয়ে তৃণমূল আরও সুর চড়িয়েছে।

মোটের ওপর, এসআইআর প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল বনাম নির্বাচন কমিশনের সংঘাত এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তৃণমূলের বক্তব্য—“এ প্রক্রিয়া বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।” অন্যদিকে কমিশনের দাবি—এটি কেবলমাত্র নিয়মিত ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ। পরিস্থিতি যে আরও উত্তাল হবে, তা শুক্রবারের সংঘাতই স্পষ্ট করে দিল।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.