প্রথম পাতা খবর রেশন বরাদ্দে বদল: জানুয়ারি থেকে চাল কমে গম বাড়ছে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ রাজ্যে

রেশন বরাদ্দে বদল: জানুয়ারি থেকে চাল কমে গম বাড়ছে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ রাজ্যে

28 views
A+A-
Reset

আগামী বছরের শুরু থেকেই জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা রেশন গ্রাহকদের খাদ্যশস্য বরাদ্দে পরিবর্তন আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের খাদ্যদপ্তর আগের মতোই বরাদ্দ বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রককে চিঠি দিয়েছিল। তবে সেই অনুরোধ খারিজ করে দিয়ে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, নতুন বরাদ্দ কাঠামো কার্যকর করতেই হবে।

বর্তমানে জাতীয় প্রকল্পের এসপিএইচ এবং এসপিপিএইচ শ্রেণির রেশন গ্রাহকরা মাথাপিছু মাসে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য পান। এর মধ্যে ২ কেজি গম এবং ৩ কেজি চাল দেওয়া হয়। অন্যদিকে অন্ত্যোদয় শ্রেণির গ্রাহকরা পরিবারপিছু মাসে মোট ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পান, যার মধ্যে ২০ কেজি চাল এবং ১৫ কেজি গম থাকে। কিন্তু আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এই অনুপাত বদলাতে চলেছে।

কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসপিএইচ ও এসপিপিএইচ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৫ কেজির মধ্যে এবার ৩ কেজি গম এবং ২ কেজি চাল দেওয়া হবে। অন্ত্যোদয় শ্রেণির পরিবারগুলি মাসে পাবে ২০ কেজি গম ও ১৫ কেজি চাল। জানুয়ারি থেকে গ্রাহকের সংখ্যার ভিত্তিতে এই নতুন অনুপাতেই রাজ্যগুলিকে খাদ্যশস্য বরাদ্দ করবে কেন্দ্র।

খাদ্যমন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়েছে, গ্রাহকদের হাতে কতটা খাদ্যশস্য পৌঁছবে, তা রাজ্য সরকার ঠিক করতে পারে। তবে কেন্দ্র যে পরিমাণ বরাদ্দ করবে, তার থেকে কম দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ রাজ্য চাইলে মাথাপিছু চালের পরিমাণ ৩ কেজি করেই রাখতে পারে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে গমের বরাদ্দ কমানো যাবে না—৩ কেজি গম দিতেই হবে।

রাজ্য সরকারের আপত্তির পিছনে রয়েছে বাস্তব অর্থনৈতিক কারণ। রেশন গ্রাহকদের জন্য প্রয়োজনীয় চালের বড় অংশই রাজ্যের চাষিদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কিনে সংগ্রহ করা হয়। সেই ধান থেকে উৎপাদিত চালই রেশন ব্যবস্থায় সরবরাহ করা হয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুল—দুটির জন্যই রাজ্য আলাদাভাবে চাল মজুত করে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প ছাড়াও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং স্কুলের মিড-ডে মিল প্রকল্পের জন্যও এই সেন্ট্রাল পুলের চাল ব্যবহৃত হয়।

চলতি ২০২৫–২৬ খরিফ মরশুমে রাজ্য সরকার চাষিদের কাছ থেকে মোট ৬৭ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এর মধ্যে ৪১ লক্ষ ১৫ হাজার টন ধান কেনা হবে সেন্ট্রাল পুলের জন্য। কিন্তু রেশন ব্যবস্থায় চালের বরাদ্দ কমে গেলে সেন্ট্রাল পুলে চালের চাহিদাও কমবে। ফলে রাজ্যের ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে চাষিদের উপর।

রেশন ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু এই পরিস্থিতিতে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাজ্য সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করুক। অতিরিক্ত যে চাল উৎপাদিত হবে, তা এফসিআই-এর মাধ্যমে অন্য রাজ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের গুদামে বর্তমানে গমের মজুত বেশি থাকায়ই গমের বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

সব মিলিয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে রেশন গ্রাহকদের খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি রাজ্যের কৃষি ও খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় কী প্রভাব পড়ে, সেদিকেই এখন নজর প্রশাসনিক মহলের।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.