প্রথম পাতা খবর নাম বদলেই নয়, টাকাও কাটছাঁট! ১০০ দিনের কাজে নতুন কেন্দ্রীয় আইনে রাজ্যের ঘাড়ে চাপবে বোঝা

নাম বদলেই নয়, টাকাও কাটছাঁট! ১০০ দিনের কাজে নতুন কেন্দ্রীয় আইনে রাজ্যের ঘাড়ে চাপবে বোঝা

27 views
A+A-
Reset

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে ‘১০০ দিনের কাজ’ চালু করা নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানা থামছেই না। একের পর এক নতুন শর্ত চাপিয়ে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত আরও তীব্র করেছে মোদি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই শর্তগুলিকে আগেই ‘অসম্মানজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্যেই সামনে এল আরও গুরুতর অভিযোগ—কেন্দ্র শুধু প্রকল্পের নাম বদলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, প্রস্তাবিত নয়া আইন কার্যকর হলে রাজ্যের ঘাড়ে চাপবে বিপুল অঙ্কের আর্থিক বোঝা।

নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে বছরে একধাক্কায় প্রায় ২,৮৮০ কোটি থেকে ৩,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। এতদিন পর্যন্ত ‘১০০ দিনের কাজ’-এর মজুরি বাবদ সম্পূর্ণ অর্থই দিত কেন্দ্র। কিন্তু নতুন আইনে সেই কাঠামো বদলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নয়া আইনে মজুরির ৬০ শতাংশ দেবে কেন্দ্র, আর বাকি ৪০ শতাংশ দিতে হবে রাজ্যকে। ফলে রাজ্যের কোষাগারে ভয়াবহ চাপ পড়বে।

২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বাংলায় বছরে গড়ে ৪০ কোটি শ্রম দিবস তৈরি হয়েছিল। নতুন মজুরি হার দৈনিক ২৪০ টাকা ধরে হিসেব করলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭,২০০ কোটি টাকা। তার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২,৮৮০ কোটি টাকা রাজ্যকেই বহন করতে হবে—এমনটাই দাবি প্রশাসনিক মহলের।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্র বলেছিল নতুন জিএসটি নীতিতে রাজ্যের আয় বাড়বে। বাস্তবে ঠিক উল্টোটা হয়েছে। উপরন্তু রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা এখনও আটকে রেখেছে কেন্দ্র। তার উপর নতুন আইন এনে রাজ্যের উপর আর্থিক চাপ বাড়ানো সম্পূর্ণ জনবিরোধী।”

নাম বদল

এর মধ্যেই নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিলের নাম। ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আইন (মনরেগা)’ বাতিল করে তার বদলে সংসদে পেশ করার কথা ছিল ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) বিল’—সংক্ষেপে ‘ভিবি-জি রাম জি’

মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দিয়ে কৌশলে ‘রাম’ শব্দ জুড়ে দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধীরা। সোমবার লোকসভার সাপ্লিমেন্টারি লিস্ট অব বিজনেসে বিলটি পেশ করার কথা ঘোষণা হলেও, বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় মোদি সরকার।

স্পিকার ওম বিড়লার ডাকা বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিবাদ জানান তৃণমূলের কাকলি ঘোষদস্তিদার, কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল, ডিএমকের দয়ানিধি মারান, এনসিপি (এসপি)-র সুপ্রিয়া সুলে এবং শিবসেনা (উদ্ধবপন্থী)-র অরবিন্দ সাওয়ান্ত।

সংসদ চত্বরে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রশ্ন, “গান্ধীজির নামেও আপত্তি? শুধু নাম বদলাতে কত অপ্রয়োজনীয় সরকারি অর্থ খরচ হয়, তা কি সরকার ভেবে দেখেছে?”

তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের কটাক্ষ,“এটা গান্ধীজিকে অপমান। যদিও এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যারা গান্ধীর হত্যাকারীকে পুজো করে, তারা তো মহাত্মার নাম মুছবেই।”

সব মিলিয়ে ‘১০০ দিনের কাজ’ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত নতুন মাত্রা পেল। একদিকে নাম বদল ও আদর্শগত লড়াই, অন্যদিকে রাজ্যের ঘাড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক বোঝা—এই দ্বিমুখী চাপেই উত্তপ্ত বাংলার রাজনীতি।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.