লিওনেল মেসির সফর ঘিরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলা নিয়ে এবার মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ বক্তব্য, ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন বারবার রাজ্য সরকারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে—এই প্রশ্নই তুলেছেন তিনি।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ঘটনা প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “যুবভারতীতে যা ঘটেছে, তার এক ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। পুলিশকর্তা থেকে শুরু করে মন্ত্রী—সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরেও আমাদের কেন বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে?”
এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, “খোদ মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এটাই তাঁর দায়বদ্ধতা ও নৈতিক সাহসের পরিচয়। তিনি জানেন কীভাবে দায়িত্ব নিতে হয়, আবার প্রয়োজনে ঝুঁকতেও জানেন। একটা ঘটনা ঘটেছে, তার পর রাজ্যের তরফে যা যা করার, সবই করা হয়েছে।”
এর পাশাপাশি বিজেপিকে কটাক্ষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“কুম্ভ মেলায় পদপিষ্ট হয়ে যখন বহু মানুষের মৃত্যু হয়, তখন তো প্রধানমন্ত্রী বা যোগী আদিত্যনাথকে কেউ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় না। তদন্ত তো দূরের কথা, ন্যূনতম ক্ষমা চাওয়ার দাবিও ওঠে না। তখন যোগী আদিত্যনাথ বা সুকান্ত মজুমদারদের কাঠগড়ায় তোলা হয় না কেন?”
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর ‘গোট ট্যুর’-এর অংশ হিসেবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আসেন লিওনেল মেসি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ ও রড্রিগো ডি পল। তবে অভিযোগ, হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও বহু দর্শক মেসিকে ঠিকভাবে দেখতে পাননি। মেসি মাঠ ছাড়ার সময় ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ গ্যালারি থেকে বোতল ছোড়ে, ব্যানার ভাঙচুর করে এবং ব্যারিকেড টপকে মাঠে নেমে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা চালায়।
এই ঘটনার পর ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেসি ও দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি দ্রুত কাজ শুরু করে এবং প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য একাধিক কড়া শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ মেনে গঠন করা হয়েছে সিট। শোকজ করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার এবং যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব রাজেশ কুমার সিনহাকে। সাসপেন্ড করা হয়েছে বিধাননগরের ডিসি অনীশ সরকারকে। পাশাপাশি বরখাস্ত করা হয়েছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সিইও দেবকুমার নন্দনকে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্য সরকার যেভাবে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ করেছে, তা সম্পূর্ণ ইতিবাচক। তাঁর কথায়, “এর পরেও যদি প্রশ্ন তোলা হয়, তবে সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছাড়া আর কিছুই নয়।”