স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের অবদান উপেক্ষা করতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার—এই অভিযোগ তুলে সংসদে সরব হলেন তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এনসিইআরটির পাঠ্যবইয়ে বাংলার গৌরবময় বিপ্লবী ইতিহাসকে পরিকল্পিত ভাবে আড়ালে রাখা হচ্ছে। সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রশ্ন, ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো শহিদদের কাহিনী কেন পড়ানো হবে না?
ঋতব্রত বলেন, এনসিইআরটির ইতিহাস বইয়ে অগ্নিযুগের বাঙালি বিপ্লবীদের কথা আংশিক ভাবে থাকলেও তা সম্পূর্ণ নয়। যুগান্তর বা অনুশীলন সমিতির মতো কিছু বিপ্লবী সংগঠনের উল্লেখ থাকলেও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের তৈরি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নাম কার্যত অনুপস্থিত। ফলে ওই সংগঠনের সদস্য বিনয়, বাদল ও দীনেশের মতো বিপ্লবীরাও পাঠ্যবইয়ে জায়গা পাননি।
সংসদে ঋতব্রত প্রশ্ন তোলেন, কেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের ইতিহাস ব্রাত্য থাকবে? কেন বিনয়-বাদল-দীনেশদের আত্মবলিদানের কাহিনী ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হবে না? তাঁর দাবি, প্রদ্যোত ভট্টাচার্য, প্রভংশু শেখর পাল, সন্তোষ কুমার মিত্র, তারকেশ্বর সেন, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, মৃগেন্দ্র নাথ দত্তদের মতো অসংখ্য বাঙালি বিপ্লবীর নামও পাঠ্যবইয়ে থাকা উচিত।
কেন্দ্রের উদ্দেশে লিখিত প্রশ্নে তৃণমূল সাংসদ উল্লেখ করেন, আন্দামানের সেলুলার জেলের বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই ছিলেন বাঙালি। তিনি বলেন, “ওঁরা কেউ অমরত্বের প্রত্যাশা করেননি। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু তাঁরা আমাদের দেশের সম্পদ—সাহসী বাঙালি। ইতিহাসে তাঁদের স্থান না থাকা দুর্ভাগ্যজনক।”
এই প্রসঙ্গে সাভারকরকে কটাক্ষ করে ঋতব্রত বলেন, “যাঁরা ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন, তাঁদের নাম ইতিহাসে রয়েছে। অথচ আত্মবলিদান দেওয়া বাঙালি বিপ্লবীদের নাম নেই।” তাঁর সাফ দাবি, স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের অবদান ও তাঁদের বিপ্লবী ইতিহাস এনসিইআরটির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সব মিলিয়ে, ইতিহাসচর্চায় বাঙালি বিপ্লবীদের যথাযথ স্বীকৃতির দাবিতে সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র সরব তৃণমূল সাংসদ।